যে সব সম্পদের যাকাত দিতে হয় না
১. প্রকৃত প্রয়োজনের জন্যে যে অর্থ রাখা হয়েছে তা যদি ঐ বছরেই খরচ করার প্রয়োজন হয় তাহলে তার যাকাত দিতে হবে না। আর যদি সে বছরের পর ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে তাহলে তার যাকাত দিতে হবে।—(ইলমুল ফেকাহ-৪র্থ)
২. ঘরের সাজ-সরঞ্জাম, যেমন তামা, পিতল, এলুমুনিয়ম, ষ্টীল প্রভৃতির বাসনপত্র, পরণের এবং গায়ে দেয়ার কাপড়-চোপড়, সতরঞ্চি, ফরাশ, ফার্নিচার প্রভৃতি, সোনা চাঁদি ছাড়া অন্য ধাতুর অলংকার, মতির হার প্রভৃতি, যতোই মূল্যবান হোক, তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। -(বেহেশতী জিউর-৩য় খণ্ড)
৩. কারো কোনো মাল হারিয়ে গেল কিংবা অর্থ হারিয়ে গেল। তারপর কিছুকাল পরে আল্লাহর ফজলে তা পাওয়া গেল এবং হারানো অর্থ হস্তগত হলো, তাহলে হারানোর সময়ের যাকাত ওয়াজিব হবে না। এজন্যে যে, যাকাত ওয়াজেব হওয়ার জন্যে মাল নিজের আয়ত্ত্বে এবং মালিকানায় থাকা দরকার।
৪. কেউ গ্রেফতার হলে তার মালেরও যাকাত দিতে হবে। তার অবর্তমানে যে ব্যক্তিই তার কারবার চালাবে অথবা তার মালের মোতাওয়াল্লী হবে সে যাকাত দেবে।-(রাসায়েল ও মাসায়েল-২য় খণ্ড)
৫. মুসাফিরের মালের ওপর যাকাত ওয়াজিব যদি সে সাহেবে নেসাব হয়। অবশ্যি মুসাফির হওয়ার কারণে গ্রহণেরও হকদার হবে। কিন্তু যেহেতু সে ধনী ও সাহেবে নেসাব। সে জন্যে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব । তার সফর তাকে যাকাতের হকদার বানায় এবং তার মালদার হওয়া তার ওপর যাকাত ফরয করে।-(বেহেশতী জিউর-৩য় খণ্ড)
৬. কেউ যদি কোনো কিছু কারো কাছে রেহেন বা বন্ধক রাখে তাহলে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। যে রেহেন দেবে এবং যে নেবে তাদের, কারো ওপরেই ওয়াজিব হবে না।-(ইলমুল ফেকাহ-৪র্থ)
৭. কারো কাছে বছরের প্রথমে নেসাবের পরিমাণ মাল মওজুদ ছিল । মাঝখানে কিছু সময় তা হারিয়ে গেল অথবা নিঃশ্বেস হয়ে গেল। তারপর বছরের শেষ ভাগে আল্লাহর ফজলে নেসাবের পরিমাণ মাল হয়ে গেল, তাহলে সে মালের যাকাত ওয়াজিব হবে। মাঝামাঝি সময়ে মাল না থাকা ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য হবে না ।-(ইলমুল ফেকাহ)
৮. কেউ কাউকে কিছু দান করলো। তা যদি নেসাবের পরিমাণ হয় এবং এক বছর অতীত হয় তাহলে তার যাকাত ওয়াজিব হবে। (বেহেশতী জিউর-৩য় খণ্ড)
৯. কোনো উৎসবের জন্যে কেউ বহু পরিমাণ শস্যাদি খরিদ করলো । তারপর মুনাফার জন্যে তা বিক্রি করে দিল। তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। যাকাত ঐ মালের ওপর ওয়াজিব হবে যা ব্যবসার নিয়তে কেনা হবে। -(বেহেশতী জিউর-৩য় খণ্ড)
১০. যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর কারো সব সহায়-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেলে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না।
১১. যে মালের মধ্যে অন্য কোনো হক, যেমন- ওশর, খেরাজ প্রভৃতি ওয়াজিব হয়, তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না।—(ইলমুল ফেকাহ-৪র্থ)
১২. কোনো ব্যবসায় কয়েক ব্যক্তি অংশীদার। সকলের টাকাই লাগানো হয়েছে। যদি প্রত্যেক অংশীদারের পৃথক পৃথক অংশ নেসাবের কম হয় তাহলে কারো ওপরে যাকাত ওয়াজিব হবে না, তাদের সকলের মোট অংশ নেসাব পরিমাণ হোক বা তার অধিক হোক।
১৩. কারো কাছে হাজার টাকা ছিল। বছর পূর্ণ হওয়ার পর পাঁচশ টাকা নষ্ট হয়ে গেল এবং বাকী পাঁচশ সে ব্যক্তি খয়রাত করে দিল। তাহলে নষ্ট হওয়া টাকার যাকাতই ওয়াজিব রইলো-খয়রাতের টাকার যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
ইমাম শাফেয়ী (র)-এর মতে সমুদয় টাকার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে। যদি ব্যবসায় মোট টাকা নেসাবের পরিমাণ বা তার বেশী হয় তাহলে যাকাত ওয়াজিব হবে-পৃথকভাবে প্রত্যেক অংশীদারের অংশ নেসাব পরিমাণ না হলেও।
১৪. কোনো ব্যক্তি রমযান মাসে দু হাজার টাকার যাকাত দিয়ে দিল। এ দু হাজার টাকা তার কাছে সংরক্ষিত রয়ে গেল। এখন রজব মাসে আল্লাহর ফজলে আরও দু হাজার অতিরিক্ত সে পেয়ে গেল। এখন বছর পূর্ণ হওয়ার পর তাকে চার হাজারের যাকাত দিতে হবে। তার একথা মনে করলে চলবে না যে, সে রজব মাসে যা পেলো তা এক বছর পূর্ণ হয়নি। বছরের ভেতরে যে টাকা বা মাল বাড়বে, তা ব্যবসার মুনাফার কারণে হোক অথবা পশুর বাচ্চা হওয়ার কারণে হোক । অথবা দান বা মীরাস পাওয়ার কারণে হোক।
মোটকথা, যেভাবেই মাল বা অর্থ পাওয়া যাক না কেন, সব মালেরই যাকাত দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে পাওয়া মাল বা অর্থ এক বছর পূর্ণ না হলেও তার যাকাত দিতে হবে।
আরো পড়ুন :
যাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কি কি
ট্যাগ সমূহ : যে সব সম্পদের উপর যাকাত দিতে হয় না,কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত দিতে হয় না,কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত দিতে হয়,যাকাত ওয়াজিব হওয়ার কিছু মাসায়েল,কোন সম্পদের উপর যাকাত দিতে হয়,কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ,কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত দিতে হয় না,যে সব সম্পদের উপর যাকাত দিতে হয়,যে সব সম্পদের যাকাত দিতে হয় না,যে সব সম্পদের যাকাত দিতে হয়,যে সব সম্পদের উপর যাকাত দিতে হয় না |