যাকাত এর গুরুত্ব ও ফজিলত

যাকাত,যাকাত শব্দের অর্থ কি,যাকাত কাকে বলে,যাকাত কি,যাকাত অর্থ কি,যাকাতের গুরুত্ব,যাকাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত,যাকাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব,যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব,যাকাত সম্পর্কে হাদিস,যাকাতের আয়াত,যাকাতের ফজিলত,যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য pdf,যাকাতের মর্ম,যাকাত এর গুরুত্ব ও ফজিলত,
সূচীপত্র :
১. যাকাত শব্দের অর্থ কি
২.যাকাতের মর্যাদা
৩.যাকাতের গুরুত্ব ও মহত্ব
৪. যাকাতের ফজিলত
৫. জাকাত ব্যবস্থার উদ্দেশ্য
৬.পূর্ববর্তী শরীয়াতে জাকাত ছিলো কি না

আরো বিস্তারিত লিংক-
জাকাত কি ?
জাকাতের নিসাব কি
যাদের উপর জাকাত ফরজ
জাকাত দেওয়ার নিয়ম কানুন
জাকাতের গুরুত্ব
জাকাতের বিভিন্ন মাসআলা মাসায়েল
ছাগলের জাকাতের নিসাব
গরুর জাকাতের নিসাব কয়টি
উটের জাকাতের নিসাব কয়টি
গহনা ও অলংকারের জাকাত
স্বর্ণের জাকাতের নিসাব কত
ব্যবসার মালের জাকাত এর পদ্ধতি
শতকরা কত পার্সেন্ট জাকাত দিতে হয়
কাদের কে জাকাত দেওয়া জায়েয নেই
জাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কি কি
জাকাত আদায় সহীহ হওয়ার শর্ত
যে সব সম্পদের জাকাত দিতে হয় না
মুদ্রা ও নোটের জাকাত এর পরিমাণ

যাকাত শব্দের অর্থ কি

যাকাত শব্দের অর্থ : পাক হওয়া, বেড়ে যাওয়া, বিকশিত হওয়া। যাকাত কাকে বলে : ফেকার পরিভাষায় যাকাতের অর্থ হচ্ছে একটি আর্থিক ইবাদাত। প্রত্যেক সাহেবে নেসাব মুসলমান তার মাল থেকে শরীয়াতের নির্ধারিত পরিমাণ মাল ঐসব লোকদের জন্যে বের করবে শরীয়াত অনুযায়ী জাকাত নেয়ার যারা হকদার। যাকাত দিলে মাল পাক পবিত্র হয়। তারপর আল্লাহ মালে বরকত দান করেন। তার জন্যে আখেরাতে যাকাত দানকারীকে এতো পরিমাণ প্রতিদান ও পুরস্কার দেন যে, মানুষ তা ধারণাও করতে পারে না। এজন্যে এ ইবাদাতকে যাকাত অর্থাৎ পাককারী এবং বর্ধিতকারী আমল বলা হয়েছে।

যাকাতের মর্যাদা

যাকাত ইসলামের তৃতীয় বৃহৎ রুকন বা স্তম্ভ। দ্বীনের মধ্যে নামাযের পরই জাকাতের স্থান। বস্তুত কুরআন পাকে স্থানে স্থানে ঈমানের পরে নামাযের এবং নামাযের পরে জাকাতের উল্লেখ করা হয়েছে। যার থেকে একদিকে এ সত্য সুস্পষ্ট হয় যে, দ্বীনের মধ্যে নামায এবং যাকাতের মর্যাদা কতখানি। অপরদিকে এ ইংগিতও পাওয়া যায় যে, নামাযের পরে মর্যাদা বলতে যাকাতেরই। এ তথ্য নবী পাক (স)-এর হাদীস থেকেও সুস্পষ্ট হয় যে,

হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) বলেন, নবী (স) মায়ায বিন জাবাল (রা)-কে ইয়ামেনে পাঠাবার সময় নিম্নোক্ত অসিয়ত করেন : তুমি সেখানে এমন সব লোকের মধ্যে পৌঁছতেছ যাদেরকে কেতাব দেয়া হয়েছিল । তুমি সর্ব প্রথম তাদেরকে ঈমানের সাক্ষ্যদানের দাওয়াত দেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর রাসূল।’ তারা যখন এ সত্য স্বীকার করে নেবে তখন তাদেরকে বলে দেবে যে, আল্লাহ রাত ও দিনের মধ্যে তাদের ওপর পাঁচবার নামাজ ফরয করে দিয়েছেন।

তারা এটাও মেনে নিলে তাদেরকে বল যে, আল্লাহ তাদের ওপর সাদকা (জাকাত) ফরয করেছেন। তা নেয়া হবে তাদের সচ্ছল ব্যক্তিদের কাছ থেকে এবং বণ্টন করা হবে তাদের মধ্যকার অক্ষম ও অভাবগ্রস্তদের মধ্যে। তারা একথাও যখন মেনে নেবে তখন যাকাত আদায় করার সময় বেছে বেছে তাদের ভালো ভালো মাল নেবে না এবং মযলুমের বদদোয়া থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ মযলুম ও আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দার প্রতিবন্ধকতা থাকে না।-(বুখারী, মুসলিম)

যাকাতের গুরুত্ব ও মহত্ব

ইসলামে জাকাতের যে অসাধারণ মহত্ব ও গুরুত্ব রয়েছে তার অনুমান এর থেকে করা যায় যে, কুরআন পাকে অন্তত বত্রিশ স্থানে নামায ও জাকাতের এক সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। ঈমানের পর প্রথম দাবীই হচ্ছে নামায ও যাকাতের। প্রকৃতপক্ষে এ দু’টি ইবাদাত পালন করার অর্থ গোটা দ্বীন পালন করা। যে বান্দাহ মসজিদের মধ্যে আল্লাহর সামনে গভীর আবেগ সহকারে তার দেহ ও মন বিলিয়ে দেয়, সে মসজিদের বাইরে আল্লাহর হক কিভাবে অবহেলা করতে পারে ? ঠিক তেমনি ভাবে যে ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্যে আল্লাহর পথে সন্তুষ্ট চিত্তে বিলিয়ে দিয়ে মনে গভীর শান্তি অনুভব করে, সে ব্যক্তি অন্যান্য বান্দাদের হক কিভাবে নষ্ট করতে পারে ?

আর ইসলাম তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ও বান্দার হকেরই বহিঃপ্রকাশ। এজন্যে কুরআন নামায এবং জাকাতকে ইসলামের পরিচায়ক এবং ইসলামের গণ্ডির মধ্যে প্রবেশের সাক্ষ্য বলে গণ্য করে। সূরা তাওবায় আল্লাহ তায়ালা মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা ও অসন্তোষ প্রকাশের পর মুসলমানদেরকে এ হেদায়াত দেন যে, তারা যদি কুফর ও শিরক থেকে তাওবা করে নামায কায়েম করতে ও জাকাত দিতে থাকে, তাহলে তারা দ্বীনী ভাই বলে গণ্য হবে। তারপর ইসলামী সমাজে তাদের সেস্থান হবে যা মুসলমানদের আছে।

فان تابوا وأقاموا الصلوة واثـوا الزكوة فإخوانكم في الدين –
“যদি তারা (কুফর ও শিরক থেকে) তাওবা করে এবং নামায কায়েম করে ও জাকাত দেয় তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।” -(সূরা আত তাওবা আয়াত নং : ১১)

এ আয়াত একথাই বলে যে, নামায ও জাকাত ইসলামের সুস্পষ্ট আলামত এবং অকাট্য সাক্ষ্য। এজন্যে কুরআন জাকাত না দেয়াকে মুশরিকদের নিদর্শন ও কর্মকাণ্ড বলে অভিহিত করেছে। এ ধরনের লোককে আখেরাতে অস্বীকারকারী ও ঈমান থেকে বঞ্চিত বলা হয়েছে।

وويل للمشركين الذين لايؤتون الزكوة وهم بالاخرة هم كفرون
“ধ্বংস ওসব মুশরিকদের জন্যে যারা যাকাত দেয় না এবং আখেরাত অস্বীকার কারী।”-(সূরা হা-মীম-আস-সাজদা : ৬-৭)

প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা)-এর খেলাফত কালে যখন কিছু লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করলো তখন তিনি তাদেরকে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ও মুরতাদ হওয়ার সমতুল্য মনে করলেন এবং ঘোষণা করলেন, এসব লোক নবীর যামানায় যে জাকাত দিতো তার মধ্য থেকে একটি ছাগলের বাচ্চা দিতেও যদি অস্বীকার করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জেহাদ করবো।

হযরত উমর (রা) সিদ্দিকে আকবরকে বাধা দিয়ে বললেন, আপনি তাদের বিরুদ্ধে কি করে জেহাদ করবেন—যেহেতু তারা কালেমায় বিশ্বাসী। তিনি আরও বলেন, নবী (স)-এর ইরশাদ হচ্ছে যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলবে তার জান মাল আমার পক্ষ থেকে নিরাপদ। হযরত আবু বকর (রা) তার দৃঢ় সংকল্পের কথা ঘোষণা করে বলেন। والله لأقاتلن مـن فـرق بين الصلوة والزكوة – (بخاری ومسلم) “আল্লাহর কসম যারা নামাজ ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে তহলে তাদের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই যুদ্ধ ঘোষনা করবো।-(বুখারী, মুসলিম)

যাকাতের ফজিলত

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যখন মু’মিন তার প্রিয় এবং পছন্দসই মাল আল্লাহর পথে সন্তুষ্টচিত্তে ব্যয় করে তখন সে মু’মিনের দিলে এক নূর এবং উজ্জ্বলতা পয়দা হয়। বস্তুগত আবর্জনা ও দুনিয়ার মহব্বত দূর হয়ে যায়। তারপর মনের মধ্যে একটা সজীবতা, পবিত্রতা এবং আল্লাহর মহব্বতের প্রেরণা সৃষ্টি হয়। অতপর তা বাড়তেই থাকে । যাকাত দেয়া স্বয়ং আল্লাহর মহব্বতের স্বরূপ এবং এ মহব্বত বাড়াবার কার্যকর এবং নির্ভরযোগ্য উপায়ও।

জাকাতের মর্ম শুধু এ নয় যে, তা দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্তের ভরণ-পোষণ ও ধনের সঠিক বণ্টনের একটা প্রক্রিয়া-পদ্ধতি । বরঞ্চ তা আল্লাহ তায়ালার ফরয করা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতও বটে। এছাড়া না মানুষের মন ও রূহের পরিশুদ্ধি বা পবিত্রকরণ সম্ভব আর না সে আল্লাহর মুখলেস ও মুহসেন (সৎ) বান্দাহ হতে পারে । যাকাত প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামতের জন্যে তার শোকর গুযারীর বহিঃপ্রকাশ। অবশ্যি আইনগত যাকাত এই যে, যখন সচ্ছল লোকের মাল এক বছর পার হয়ে যাবে তখন সে তার মাল থেকে একটা নির্দিষ্ট অংশ হকদারদের জন্যে বের করবে। কিন্তু জাকাতের মর্ম শুধু তাই নয়।

বরঞ্চ আল্লাহ তায়ালা এ আমলের দ্বারা মু’মিনের দিল থেকে দুনিয়ার সকল প্রকার বস্তুগত মহব্বত বের করে নিয়ে সেখানে তার আপন মহব্বত বসিয়ে দিতে চান। এভাবে তিনি তরবিয়ত দিতে চান যে, মু’মিন আল্লাহর পথে তার মাল জান সকল শক্তি ও যোগ্যতা কুরবান করে রূহানী শান্তি ও আনন্দ লাভ করুক। সবকিছু আল্লাহর পথে বিলিয়ে দিয়ে কৃতজ্ঞতার আবেগ প্রকাশ করুক যে, আল্লাহ তার ফযল ও করমে তারপথে জানমাল কুরবান করার তাওফীক তাকে দিয়েছেন।

এজন্যে শরীয়াত যাকাতের একটা আইনগত সীমা নির্ধারণ করে দিয়ে বলেছে যে, এতোটুকু ব্যয় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে অপরিহার্য। এতোটুকু খরচ না করলে তো ঈমানই সন্দেহযুক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু তার সাথে সাথে সর্বশক্তি দিয়ে এ প্রেরণাও দিয়েছে যে, একজন মু’মিন যেন অতটুকু ব্যয় করাকেই যথেষ্ট মনে না করে। বরঞ্চ বেশী বেশী আল্লাহর পথে খরচ করার অভ্যাস যেন করে। নবী (স) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা)-এর জীবন থেকেও এ সত্যই আমাদের সামনে প্রকটিত হয়।

হযরত আবু যার (রা) বলেন, একবার আমি নবী (স)-এর দরবারে হাযির হলাম। তিনি তখন কা’বা ঘরের ছায়ায় আরাম করছিলেন। আমাকে দেখে তিনি বললেন, কা’বার রবের কসম। ওসব লোক ভয়ানক ক্ষতির সম্মুখিন। বললাম, আমার মা-বাপ আপনার জন্যে কুরবান হোক, বলুন তারা কে যারা ভয়ানক ক্ষতির সম্মুখিন। ইরশাদ হলো, ঐসব লোক যারা পুঁজিপতি ও সচ্ছল । হাঁ, তাদের মধ্যে ঐসব লোক ক্ষতি থেকে নিরাপদ যারা খোলা মনে সামনে- পেছনে, ডানে-বামে তাদের মাল আল্লাহর পথে খরচ করছে। কিন্তু মালদারের মধ্যে এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম।-(বুখারী, মুসলিম)

হযরত আনাস (রা) বলেন, এক ব্যক্তি নবী পাক (স)-এর দরবারে হাযির হলো। সে নবীর কাছে সওয়াল করলো। তখন নবী (স)-এর কাছে এতো সংখ্যক ছাগল ছিল যে, দু’ পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকা ছাগলে পরিপূর্ণ ছিল। নবী (স) সওয়ালকারীকে সেসব ছাগল দান করে দিলেন। সে যখন তার কওমের কাছে ফিরে গেল তখন তাদেরকে বললো–লোকেরা ! তেমারা সব মুসলমান হয়ে যাও। মুহাম্মাদ (স) এতোবেশী পরিমাণে দান করেন যে, অভাবগ্রস্ত হওয়ার কোনো ভয় আর থাকে না।-(কাশফুল মাহজুব)

হযরত আয়েশা (রা) বলেন, একবার বাড়ীতে একটি ছাগল যবেহ হলো । নবী (স) ঘরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ছাগলের গোশত কিছু আছে কিনা ? হযরত আয়েশা (রা) বলেন, শুধু একটা রান বাকী আছে (আর সব বণ্টন করা হয়েছে)। নবী বললেন, না বরঞ্চ ঐ রান ছাড়া আর যা কিছু বণ্টন করা হয়েছে তাই আসলে বাকী রয়েছে (যার প্রতিদান বা মূল্য আখেরাতে আশা করা যায় ।-(জামে তিরমিযি)

একবার হযরত হুসাইন (রা)-এর দরবারে এক ভিখারী এসে বললো-হে নবীর পৌত্র আমার চারশ’ দিরহামের প্রয়োজন। হযরত হুসাইন (রা) তক্ষণি ঘর থেকে চারশ’ দিরহাম এনে তাকে দিয়ে দিলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। লোকেরা কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কাঁদছি এজন্যে যে, তার চাইবার আগেই তাকে কেন দিয়ে দিলাম না যার জন্যে তাকে সওয়াল করতে হলো। কেন এ অবস্থা হলো যে, সে ব্যক্তি আমার কাছে এসে ভিক্ষার জন্যে হাত বাড়ালো ?-(কাশফুল মাহজুব)

হযরত আবু হুরাইরা (রা) বলেন, নবী (স) বলেছেন : আল্লাহ তার প্রত্যেক বান্দাহকে বলেন, হে বনী আদম ! আমার পথে খরচ করতে থাক। আমি আমার অফুরন্ত ভাণ্ডার থেকে তোমাদেরকে দিতে থাকবো।-(বুখারী, মুসলিম)

হযরত আসমা বিনতে আবি বকর (রা) বলেন, নবী (স) তাকে বলেন, আল্লাহর ভরসা করে মুক্ত হস্তে তার পথে দান করতে থাক । গুণে গুণে হিসেব করে দেবার চক্করে পড়ো না যেন। গুণে গুণে আল্লাহর রাস্তায় দান করলে তিনিও গুণে গুণেই দিবেন। সম্পদ গচ্ছিত করে রেখো না। নতুবা আল্লাহও তোমার সাথে এ ব্যবহারই করবেন এবং অগণিত সম্পদ তোমার হাতে আসবে না। অতএব যতোটা হিম্মত কর খোলা হাতে আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর। -(বুখারী, মুসলিম)

যাকাত ব্যবস্থার উদ্দেশ্য

যাকাত ব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে মু’মিনের দিল থেকে দুনিয়ার মহব্বত ও তার মূল থেকে উৎপন্ন যাবতীয় ঝোপ-ঝাড় ও জঙ্গল পরিষ্কার করে সেখানে আল্লাহর মহব্বত পয়দা করতে চায়। এটা তখনই সম্ভব যখন মু’মিন বান্দাহ শুধু যাকাত দিয়ে সন্তুষ্ট থাকে না। বরঞ্চ যাকাতের সে প্রাণশক্তি নিজের মধ্যে গ্রহণ করাঁর চেষ্টা করে এবং মনে করে আমার কাছে যাকিছু আছে তা সবই আল্লাহর।

সেসব তাঁরই পথে খরচ করেই তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করা যেতে পারে। যাকাতের ঐ প্রাণশক্তি ও উদ্দেশ্য আত্মস্থ না করে না কেউ আল্লাহর জন্যে মহব্বত করতে পারে, আর না আল্লাহর হক জেনে নিয়ে তা পূরণ করার জন্যে সজাগ ও মুক্ত হস্ত হতে পারে। যাকাত ব্যবস্থা আসলে গোটা ইসলামী সমাজকে কৃপণতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, হিংসা, বিদ্বেষ, মনের কঠিনতা এবং শোষণ করার সূক্ষ্ম প্রবণতা থেকে পাক পবিত্র করে।

তার মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, ত্যাগ, দয়া- দাক্ষিণ্য, নিষ্ঠা, শুভাকাঙ্ক্ষা, সহযোগিতা, সাহচর্য প্রভৃতি উন্নত ও পবিত্র প্রেরণার সঞ্চার করে এবং সেগুলোকে বিকশিত করে। এ কারণেই যাকাত প্রত্যেক নবীর উম্মতের ওপর ফরয ছিল। অবশ্যি তার নেসাব এবং ফেকার হকুম-আহকামের মধ্যে পার্থক্য ছিল। কিন্তু যাকাতের হুকুম প্রত্যেক শরীয়াতের মধ্যেই ছিল।

পূর্ববর্তী শরীয়াতে যাকাত ছিলো কি না

জাকাতের এ মর্মকথা ও প্রাণশক্তি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে দেখলে জানা যায় যে, জাকাত মুমিনের জন্যে একটি অপরিহার্য আমল এবং একটি অপরিহার্য গুণ। এ কারণে প্রত্যেক নবীর শরীয়াতে এর হুকুম বিদ্যমান দেখতে পাওয়া যায়।

কুরআন সাক্ষ্য দেয় যে, যাকাত সকল আম্বিয়ার উম্মতের ওপর তেমনি ফরয ছিল যেমন নামায ফরয। সূরা আম্বিয়াতে হযরত মূসা (আ) ও হযরত হারুন (আ)-এর প্রসঙ্গে বর্ণনার পর বিস্তারিতভাবে সে চিন্তামূলক কথোপকথন বর্ণনা করা হয়েছে যা হযরত ইবরাহীম (আ) ও তার জাতির মধ্যে হয়েছিল । অতপর এ প্রসঙ্গেই হযরত লূত (আ) হযরত ইসহাক (আ) এবং হযরত ইয়াকুব (আ)-এর উল্লেখ করা হয়েছে।

তারপর বলা হয়েছে : “এবং আমরা তাদের সকলকে নেতা বানিয়েছি। তারা আমাদের নির্দেশ অনুযায়ী হেদায়াতের কাজ করতো। এবং আমরা তাদেরকে ওহীর মাধ্যমে নেক কাজ করার, নামাযের ব্যবস্থাপনা করার, জাকাত দেয়ার হেদায়াত করেছিলাম এবং তারা সকলে ইবাদাতকারী বান্দাহ ছিল।”

কুরআনের বিভিন্ন স্থানে ঐ ওয়াদা ও শপথের উল্লেখ করা হয়েছে যা ইহুদীদের নিকট থেকে নেয়া হয়েছিল। তার গুরুত্বপূর্ণ দফাগুলোর মধ্যে একটি দফা এটাও ছিল যে, তারা নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। আল্লাহ বলেন, “এবং স্মরণ কর সেই কথা যখন আমরা বনী ইসরাঈলের নিকট পাকা ওয়াদা নিয়েছিলাম যে, আল্লাহ ছাড়া তোমরা কারো বন্দেগী যেন না কর, মা-বাপের সাথে যেন ভালো ব্যবহার কর। আত্মীয়-স্বজন এতীম ও মিসকীনের সাথেও যেন ভালো ব্যবহার কর এবং লোকের সাথে ভালোভাবে কথা বলবে । নামায কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে।” -(সূরা আল বাকারা ঃ ৮৩)

অন্য একস্থানে বনী ইসরাঈলকেই আল্লাহ তায়ালা বলেন : وقال الله اني معكم لئن أقمتم الصلوة واتيتم الزكوة –

“এবং আল্লাহ (বনী ইসরাঈলকে) বলেন, আমি তোমাদের সাথে আছি, যদি তোমরা নামাজ কায়েম করতে থাক এবং জাকাত দিতে থাক।” -(সূরা আল মায়েদা আয়াত নং : ১২)

হযরত ইবরাহীম (আ:)-এর পুত্র এবং নবী (স:)-এর পূর্ব পুরুষ হযরত ইসমাঈল (আ:)-এর প্রশংসা করতে গিয়ে কুরআন বলে যে, তিনি তার আপন লোকজনদেরকে নামাজ কায়েম করার ও জাকাত দেয়ার তাকীদ করতেন,
وكان يامر أهله بالصلوة والزكوة م وكان عند ربه مرضيا (مريم : ٥٥) “এবং (ইসমাঈল) তার আপন লোকজনকে নামায ও জাকাতের জন্যে তাকীদ করতো এবং সে তার রবের পছন্দসই বান্দাহ ছিল।” -(সূরা মরিয়ম আয়াত নং : ৫৫)

হযরত ঈসা (আ:) তাঁর পরিচয় পেশ করতে গিয়ে তাঁর নবুয়াতের পদে ভূষিত হওয়ার উদ্দেশ্যেই এটা বলেন, আমার আল্লাহ আমাকে আজীবন নামাজ কায়েম করার ও জাকাত দেয়ার অসিয়ত করেন। وأوصني بالصلوة والزكوة مادمت حيان (مریم : ۳۱) “এবং তিনি আমাকে হুকুম করেছেন যে, আমি যেন নামাজ কায়েম করি এবং জাকাত দিতে থাকি যতোদিন বেঁচে থাকবো।”-(সূরা মরিয়ম আয়াত নং : ৩১)

আরো পড়ুন :

যাকাতের নিসাব কি

যাদের উপর যাকাত ফরজ

যে সব সম্পদের জাকাত দিতে হয় না

ট্যাগ সমূহ : যাকাত কি,যাকাত অর্থ কি,যাকাতের গুরুত্ব,যাকাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত,যাকাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব,যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব,যাকাত সম্পর্কে হাদিস,যাকাতের আয়াত,যাকাতের ফজিলত,যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য pdf,যাকাতের মর্ম,যাকাত এর গুরুত্ব ও ফজিলত

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top