মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি
ইসলাম উদারতার ধর্ম। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ব্যক্তিগত মত প্রকাশের অধিকার সকলের রয়েছে। এরই আলোকে সময়ের পরিক্রমায় সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন মতাদর্শের জন্ম হয়েছে। তেমনি কাদারিয়া সম্প্রদায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে মুসলিম দর্শনে মুতাযিলা সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। মত প্রকাশে বলিষ্ঠতার পরিচয় দিতে গিয়ে এদের সূচনা হয়। নিম্নে মুতাযিলা সম্প্রদায়ের নামকরণ ও উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা উপস্থাপন করা হলো।
মুতাজিলা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে
ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায় যে, মুতাযিলা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন ওয়াসিল ইবনে আতা। তিনি ৬৯৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। তিনি হযরত হাসান বসরী (র)-এর অন্যতম প্রধান শিষ্য ছিলেন।
মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও ইতিহাস
মুতাযিলা সম্প্রদায়ের নামকরণ ও উৎপত্তি সম্পর্কে দুটি অভিমত। যথা,
১. মুতাযিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি এক বিশেষ ঘটনার সাথে সম্পর্কিত। ঘটনাটি হলো, একদিন হাসান বসরী (র) তাঁর শিষ্য ওয়াসিল ইবনে আতা সমেত মসজিদে বসা ছিলেন। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি এসে হযরত হাসান বসরী (র)-কে জিজ্ঞেস করল; যদি কোনো মুসলমান কবীরা গুনাহ করে তবে সে মুসলমান থাকবে, নাকি কাফের হয়ে যাবে? উত্তরে হাসান বসরী (র) বললেন, সে ফাসেক হিসেবে পরিগণিত হবে; কিন্তু তাঁর প্রতিভাবান শিষ্য ওয়াসিল ইবনে আতা এ মতের বিরোধিতা করে বললেন, অনুরূপ ব্যক্তি মুসলমানও নয়, কাফেরও নয়; বরং তার স্থান এ দু’অবস্থার মাঝামাঝি।
হাসান বসরী শিষ্যের এ মত গ্রহণ করলেন না। ফলে ওয়াসিল ইবনে আতা তার উস্তাদ ইমাম হাসান বসরীর দল ত্যাগ করে মসজিদের এক কোণে সরে গিয়ে নিজের মতবাদ প্রচার করতে থাকেন। তখন হাসান বসরী (র) মন্তব্য করেন, ইতাযালা আন্না অর্থাৎ, সে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এরপর থেকে ওয়াসিল ইবনে আতা এবং তার সমর্থকগণ ইতিহাসে মুতাযিলা তথা দলত্যাগী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে অভিহিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে ওয়াসিল ইবনে আতার অনুসারীরা যুক্তিবাদী ও মুক্তবুদ্ধির অনুসারী দল হিসেবে পরিচিত।
২. এ বিষয়ে কয়েকজন ঐতিহাসিক মতামত দিয়েছেন। যেমন-
ক. অধ্যাপকনাল্লিনো মুতাযিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি সম্পর্কে বলেন, খারেজীদের মতে, কোনো মুসলমান কবীরা গুনাহ করলে কাফের হয়ে যায়। আবার মুরজিয়াদের মতে উক্ত মুসলমান ইসলাম থেকে খারিজ হয় না। মুতাযিলাগণ এ দু’চরম মতবাদ পরিত্যাগ করে মধ্যবর্তী অবস্থা গ্রহণ করেছে বলে তারা মুতাযিলা (পরিত্যাগকারী) নামে পরিচিত। মুতাযিলাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে বিচার করলে অধ্যাপক নাল্লিনোর মতই অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে প্রতীয়মান হয়। কেননা মুতাযিলারাই সর্বপ্রথম ইসলামে অনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদভিত্তিক মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তা চর্চার সূচনা করে। তারা নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে যুক্তিনির্ভর ও বাস্তবধর্মী করার পক্ষপাতী।
খ. ঐতিহাসিক গীবন বলেন, মুতাযিলা সম্প্রদায়ের অভ্যুদয়কালে এ গোষ্ঠীর চিন্তাবিদরা বুদ্ধিবাদীর চেয়ে বরং কঠোর নীতিবাদী ছিল এবং কুরআনের ওপরই প্রতিষ্ঠিত ছিল।
গ. সৈয়দ আমীর আলী বলেন, মুতাযিলা সম্প্রদায়ের প্রধান পণ্ডিতগণ ফাতেমীদের অধীনেই শিক্ষা লাভ করেছে এবং নিঃসন্দেহে বলা যায়, মধ্যপন্থি মুতাযিলাদের মতবাদ খলিফা আলী (রা) ও তাঁর অদূরবর্তী বংশধরদের মধ্যকার সর্বাপেক্ষা উদারপন্থিদের এবং সম্ভবত হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মতবাদসমূহের প্রতিনিধিত্ব করেছিল । কাজেই দেখা যাচ্ছে, অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মতো মুতাযিলা চিন্তাবিদরাও ইসলামের শিক্ষা থেকেই অনুপ্রেরণা লাভ করেছে।
আরো পড়ুন :
শিয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস
খারেজী সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
খারেজীদের বিভিন্ন দল ও তাদের প্রতিষ্ঠাতাদের নাম
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর ইতিহাস
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা
أهل السنة والجماعة -এর পরিচিতি
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বৈশিষ্ট্য
কাদিয়ানীদের আকিদার মূলনীতিসমূহ
ট্যাগ সমূহ : মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে,মুতাজিলা মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা কে,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা,মুতাজিলা সম্পর্কে টীকা,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও তাদের মতবাদ,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে |