বদলি হজ্জ এর নিয়ম
বদলি হজ্জ
বদলি হজ্জের অর্থ হলো নিজের স্থলে নিজের খরচায় অন্যকে দিয়ে হজ্জ করানো। এক ব্যক্তির ওপর হজ্জ ফরয কিন্তু কোনো অনিবার্য কারণে সে নিজে হজ্জে যেতে পারছে না। যেমন অসুস্থতা, অতি বার্ধক্য এবং এ ধরনের অন্য কোন কারণে। সে জন্যে তার এ সুযোগ রয়েছে যে, সে অন্য কাউকে তারস্থলাভীষিক্ত করে হজ্জে পাঠিয়ে দেবে এবং সে ব্যক্তি তার হয়ে হজ্জ করবে।
হযরত আবু রেযীন (রা) নবী (স)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা অতি বৃদ্ধ হয়েছেন, না তিনি করতে পারেন, না ওমরাহ । তিনি সওয়ারীর ওপর বসতেও পারেন না। নবী (স) বলেন—তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ ও ওমরাহ কর।-(তিরমিযি)
এর থেকে জানা গেল যে, অন্যের পরিবর্তেও হজ্জ করা সহীহ হবে। যে ব্যক্তি স্বয়ং তার ফরয হজ্জ আদায় করতে পারে না সে অন্যকে পাঠিয়ে নিজের ফরয আদায় করতে পারে। বরঞ্চ এমন অবস্থায় নিজের ফরয আদায় করানো উচিত। এ হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত ফরয এবং যে ব্যক্তি অন্যকে পাঠাবার সুযোগ পায় না সে অসিয়ত করে যাবে যে, তারপর তার মাল থেকে বদলা হজ্জ করাতে হবে।
এক ব্যক্তি নবী (স)-এর দরবারে হাযীর হলো এবং বললো ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার পিতার মৃত্যু হয়েছে এবং তার জীবদ্দশায় তিনি ফরয হজ্জ আদায় করতে পারেননি। তাহলে আমি কি তার হয়ে হজ্জ করবো ? নবী করিম (স.) বললেন, যদি তার কোনো দেনা পাওনা (ঋণ) থাকতো তাহলে তুমি তা পরিশোধ করতে ? লোকটি বললো- জি হাঁ, অবশ্যই পরিশোধ করতাম। নবী করিম (স.) বলেন, আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করা তো আরও জরুরী ।-(জামউল ফাওয়ায়েদ)
বদলা হজ্জ সহীহ হওয়ার শর্ত
বদলা হজ্জ সহীহ হওয়ায় ষোলটি শর্ত যার মধ্যে প্রথম পাঁচটি শর্ত তার সাথে সম্পর্কিত যে বদলা হজ্জ করাবে এবং এগারোটি শর্ত বদলা হজ্জকারীর সাথে সম্পর্কিত।
১. যে বদলা হজ্জ করাতে চায় তার স্বয়ং অক্ষম হতে হবে। তার অক্ষমতা যদি সাময়িক হয় যা দূর হওয়ার আশা আছে। তাহলে বদলা হজ্জ করাবার পর যখন সে অক্ষমতা দূর হবে তখন তাকে পুনরায় হজ্জ করতে হবে। আর যদি অক্ষমতা স্থায়ী হয় ও তা দূর হবার কোনো সম্ভাবনা না থাকে, যেমন বার্ধক্যের কারণে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে অথবা অন্ধ হয়েছে তাহলে এ অক্ষমতার শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা শর্ত নয়। যদি আল্লাহ তায়ালা তার বিশেষ মেহেরবানীতে বদলা হজ্জ করাবার পর তার অক্ষমতা দূর করে দেন তাহলে পুনর্বার হজ্জ করা ফরয হবে না—ফরয আদায় হয়ে গিয়েছে বুঝতে হবে।
২. যে বদলা হজ্জ করাতে চায়, শরীয়াতের দৃষ্টিতে তার ওপর হজ্জ ফরয হতে হবে। এমন ব্যক্তি যদি বদলা হজ্জ করায় যার ওপর হজ্জ ফরয নয় অর্থাৎ তার সামর্থ নেই, তাহলে এ বদলা হজ্জে ফরয আদায় হবে না। যেমন সে বদলা হজ্জের পর সে ব্যক্তি আর্থিক দিক দিয়ে সামর্থবান হলো এবং তার ওপর হজ্জ ফরয হলো। তখন তার করানো বদলা হজ্জের দ্বারা তার ফরয আদায় হবে না। বরঞ্চ পুনরায় বদলা হজ্জ করাতে হবে, যদি সে নিজে না পারে।
৩. বদলা হজ্জ করাবার পূর্বে এ অক্ষমতা প্রকাশ হওয়া দরকার। বদলা হজ্জ করাবার পর যদি অক্ষমতা প্রকাশ পায় তাহলে বদলা হজ্জ ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য হবে না, অক্ষমতা প্রকাশ পাওয়ার পর বদলা হজ্জ করানো জরুরী হবে।
৪. যে বদলা হজ্জ করাবে তাকে স্বয়ং হজ্জের সমুদয় খরচ বহন করতে হবে।
৫. বদলা হজ্জকারীকে মুসলমান হতে হবে।
৬. যে বদলা হজ্জ করাতে চায় তাকে স্বয়ং অন্য কাউকে হজ্জের জন্যে বলতে হবে। যদি কেউ নিজে নিজে অন্যের পক্ষ থেকে তার বলা ছাড়া হজ্জ করে তাহলে ফরয দায়মুক্ত হবে না। মরবার সময় অসিয়ত করাও বলার মধ্যেই শামিল। অবশ্য কারো ওয়ারিশ যদি মৃত ব্যক্তির অসিয়ত ছাড়া তার পক্ষ থেকে বদলা হজ্জ করে বা অন্য কারো দ্বারা করায় তাহলে ফরয আদায় হয়ে যাবে।
৭. বদলা হজ্জকারীকে হুঁশ-জ্ঞানসম্পন্ন লোক হতে হবে—পাগল বা মস্তিষ্ক বিকৃত হওয়া চলবে না।
৮. বদলা হজ্জকারীকে বুদ্ধিমান হতে হবে—নাবালেগ হলেও চলবে। বুদ্ধি- শুদ্ধি নেই এমন লোকের বদলা হজ্জ চলবে না। ফরয আদায় হবে না।
৯. বদলা হজ্জকারী ইহরাম বাঁধার সময় তার পক্ষ থেকে হজ্জের নিয়ত করবে -যে বদলা হজ্জ করাচ্ছে।
১০. সেই ব্যক্তিই বদলা হজ্জ করবে যাকে হজ্জ করতে বলবে ঐ ব্যক্তি যার পক্ষ থেকে বদলা হজ্জ করা হচ্ছে। অর্থাৎ যে বদলা হজ্জ করাচ্ছে সে যাকে বদলা হজ্জ করতে বলবে একমাত্র সেই করবে। তবে যদি এ অনুমতি সে দেয় যে, অন্য কাউকে দিয়েও সে বদলা হজ্জ করাতে পারবে। তাহলে অন্য ব্যক্তির দ্বারাও বদলা হজ্জ সহীহ হবে।
১১. বদলা হজ্জকারী ঐ ব্যক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী হজ্জ করবে যে বদলা হজ্জ করাচ্ছে। যেমন- যে ব্যক্তি বদলা হজ্জ করাচ্ছে সে যদি কেরানের কথা বলে কিংবা তামাত্তুর কথা বলে তাহলে বদলা হজ্জকারীকে তদনুযায়ী কিরান অথবা তামাততু হজ করতে হবে।
১২. বদলা হজ্জকারী একই প্রকার হজ্জের এবং এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে ইহরাম বাঁধবে। দু’ ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলা হজ্জের ইহরাম বাঁধলে ফরয আদায় হবে না।
১৩. বদলা হজ্জকারী যেন হজ্জ নষ্ট না করে। হজ্জ নষ্ট করার পর তার কাযা করলে যে বদলা হজ্জ করাচ্ছে তার ফরয আদায় হবে না।
১৪. বদলা হজ্জকারী যানবাহনে করে হজ্জে যাবে—পায়ে হেঁটে নয় ।
১৫. বদলা হজ্জ যে করাতে চায় তার স্থান থেকেই বদলা হজ্জকারীকে হজ্জের সফর শুরু করতে হবে। যদি মৃত ব্যক্তির এক-তৃতীয়াংশ মাল থেকে বদলা হজ্জ করানো হয় তাহলেও এ অর্থে যেখান থেকে হজের সফর শুরু করা যেতে পারে, সেখান থেকে সফর শুরু করতে হবে।
১৬. হানাফীদের মতে বদলা হজ্জকারীর জন্যে এ শর্ত আরোপের প্রয়োজন নেই যে, তাকে প্রথমে আপন ফরয হজ্জ আদায় করতে হবে এবং তারপর সে বদলা হজ্জ করতে পারবে। অবশ্য আহলে হাদীসের কাছে শর্ত এই যে, প্রথমে ফরয হজ্জ করে না থাকলে সে বদলা হজ্জ করতে পারবে না।
আরো পড়ুন :
হজ্জ কি প্রত্যেক বছর পালন করতে হবে
ট্যাগ সমূহ : বদলি হজ্জ,বদলি হজ্জের নিয়ম,বদলা হজ্জ,বদলী হজ্বের মাসায়েল,বদলি হজের বিধান,বদলি হজ্জ করার নিয়ম,বদলী হজ্জ,বদলি হজ্ব,বদলী হজ্বের নিয়ম,বদলি হজ,বদলা হজ্জ সহীহ হওয়ার শর্ত,বদলি হজ্জ কি,বদলি হজ্জ,বদলি হজ্জের নিয়ম,বদলা হজ্জ,বদলী হজ্বের মাসায়েল,বদলি হজের বিধান,বদলি হজ্জ করার নিয়ম,বদলী হজ্জ,বদলি হজ্ব,বদলী হজ্বের নিয়ম,বদলি হজ,বদলা হজ্জ সহীহ হওয়ার শর্ত,বদলি হজ্জ কি, |