প্রশ্ন: পানি দূষণের জন্য দায়ী উৎসসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা কর।
উত্তর: পানি দূষণের জন্য দায়ী উৎসসমূহেকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন-
১. জৈব দূষক : জৈব দূষক চার প্রকার। যথা-
(ক) অক্সিজেন ব্যবহারকারী বর্জ্য;
(খ) রোগসৃষ্টিকারী বর্জ্য;
(গ) সংশ্লেষিক জৈব যৌগ ও
(ঘ) তেল।
১. জৈব দূষণ :
(i) অক্সিজেন ব্যবহারকারী বর্জ্য : গৃহস্থালি, প্রাণিজ বর্জ্য, শিল্পজাত বর্জ্য, জৈব ভাঙনযোগ্য যৌগসমূহ এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। উপরন্তু, দুগ্ধ খামার, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ হতে প্রচুর পরিমাণ চিনি, ডেক্সাটন, গ্লাইকোজেন ইত্যাদি মিশে সালফাইডযুক্ত যৌগ উৎপন্ন হয়, যা পানিতে মিশে পচা দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। এদের দ্বারা পানি দূষিত হয়।
(ii) রোগ সৃষ্টিকারী বর্জ্য : পয়ঃবর্জ্য, রোগাক্রান্ত প্রাণীর মলমূত্র থেকে নিঃসৃত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও প্রোটোজোয়া রোগ সৃষ্টিকারী বর্জ্যের উৎস। এগুলোর মধ্যে প্যাথোজেননিক অণুজীবসমূহ অন্যতম। এদের দ্বারাও পানি দূষিত হয়।
(iii) সাংশ্লেষিক জৈব যৌগ : বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে সৃষ্ট সাংশ্লেষিক জৈব দূষক; যেমন- অ্যালডিহাইড, কিটোন ইত্যাদি। উক্ত যৌগসমূহের প্রভাবে পানিতে জলজ উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটে, কিন্তু মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ফলে পানি দূষিত হয়। বেনজিন, টলুইন, জাইলিন, স্টাইরিন ইত্যাদি পানিতে মিশ্রিত হয়ে মানুষের মধ্যে ক্যান্সার জাতীয় রোগের সৃষ্টি করে। বেনজিন জাতীয় পদার্থ পানিতে জলজ পানির জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর।
(iv) তেল : কার্গো, তেলবাহী ট্যাংকার, স্টিমার-লঞ্চ বিভিন্ন জলযান, সমুদ্র উপকূলে তেল অনুসন্ধান ইত্যাদি। এগুলো দ্বারা পানির জৈব দূষণ ঘটে।
২. অজৈব দূষক : অজৈব দূষকের মধ্যে খনিজ এসিড, অজৈব লবণ, ধাতু এবং ধাতব যৌগ, স্বল্পমাত্রার মৌল, সায়ানাইড, সালফেট, জৈব ধাতব যৌগ, নাইট্রেট, ফসফেটে অন্যতম। এসিড ও ক্ষারের প্রধান হচ্ছে এসিড ও ক্ষার শিল্পগুলো। নাইট্রিক এসিড, সালফিউরিক এসিড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড বিভিন্ন রাসায়নিক শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সার কারখানা, সিমেন্ট শিল্প, কাগজ ও মন্ড কারখানা, কস্টিক সোডা-ক্লোরিন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর পরিমাণে এসিড ও ক্ষার বর্জ্য পানির মাধ্যমে নদনদীর পানিকে দূষিত করে। ডিটারজেন্ট থেকে উদ্ভূত পলিসফেট শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদের বিকাশ ঘটায়। ফলে এগুলো ক্ষতিকর পানি দূষক।
৩. বিষক্রিয়া সম্পন্ন ধাতু : ধাতু প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, ব্যাটারি শিল্প, খনিজ পদার্থ উত্তোলন, কঠিন বর্জ্য, জীবাশ্ম জ্বালানির দহন,কারখানার বর্জ্য থেকে বিষাক্ত ধাতুসমূহের উৎপত্তি ঘটে। পেপার, টেক্সটাইল, ট্যারিসহ বিভিন্ন কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্যে অনেক বিষাক্ত ধাতু বিদ্যমান থাকে। এদের মধ্যে Pb, Cd, Hg, As, Fe, Cu, Zn, Mn ইত্যাদি পানিতে মিশ্রিত হয়ে পানিকে দূষিত করে।
উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল দ্বারা এসব ভারী ধাতু শিল্প বর্জ্য থেকে দ্রুত শোষিত হয়। সর্বশেষ গন্তব্য হয় মানুষ গৃহীত খাদ্য সামগ্রী তথা মাছ, সবজি প্রভৃতিতে। পানি এবং অন্যান্য সব উৎস থেকে মানুষ এসব দূষক খাদ্যচক্রের মাধ্যমে দেহে ধারণ করে। এসবের ক্ষতি বহুমাত্রিক। এগুলো মানুষ ও প্রাণিদেহে তাৎক্ষণিক, দীর্ঘমেয়াদি মারাত্মক ও অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে।
৪. ভাসমান কঠিন পদার্থ।
৫. তলানি : প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, কৃষিজাত উন্নয়ন কাজে, রাস্তাঘাট নির্মাণ, নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম, পাহাড় ধ্বংসসহ বিভিন্ন ক্রিয়কলাপের মাধ্যমে মাটি ক্ষয়ের কারণে তলানি, মাটি, বালুকণা প্রভৃতি ভূপৃষ্ঠের পানিতে পতিত হয়। পানিতে ভাসমান কঠিন পদার্থের উৎসই হলো ভূমি ক্ষয়ের কারণে উদ্ভূত বালি, ধূলিকণা। মূলত পলির কারণে নদীর পানি ঘোলাটে হয় এবং দূষণগ্রস্ত হয়।
এই পানি ধারকপাত্রে তলানি হিসেবে সঞ্চিত হয়। ঘোলা পানি জলজ উদ্ভিদের সলোকংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ কর। সাধারণ মাটির চেয়ে তলানিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে। এ তলানির আয়ন বিনিময় ক্ষমতা জলজ পরিবেশকে প্রভান্বিত করে। পানিতে ভাসমান অতিসূক্ষ্ম জৈব ও অজৈব কণিকা পানির আপাত বর্ণ সৃষ্টি করে ।
আরো পড়ুন : মানুষের স্বাস্থ্যের উপর আর্সেনিকের ত্বক সংক্রান্ত প্রভাব লেখ।
ট্যাগ: পানি দূষণের জন্য দায়ী উৎস,পানি দূষণের জন্য দায়ী উৎসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা,পানি দূষণের জন্য দায়ী উৎস। |