নাজাসাত কত প্রকার ও কী কী
নাজাসাত অর্থ কি
নাজাসাতের (نجاست) অর্থ হচ্ছে মলিনতা, অশুচিতা ও অপবিত্রতা । এ হলো তাহারাত (طهارت) বা পবিত্রতার বিপরীত । তাহারাতের মর্ম পন্থা-পদ্ধতি, হুকুম-আহকাম এবং মাসয়ালা জানার জন্য প্রথমে প্রয়োজন হচ্ছে যে, নাজাসাতের মর্ম, তার প্রকারভেদ এবং তা পাক করার নিয়ম-পদ্ধতি জেনে নিতে হবে । এজন্য প্রথমেই নাজাসাতের হুকুমগুলো ও সে সম্পর্কিত মাসয়ালাগুলো বর্ণনা করা হচ্ছে ।
নাজাসাত কত প্রকার
নাজাসাতের প্রকারভেদ : নাজাসাত দুই প্রকার। যথা, (১).নাজাসাতে হাকীকী (২). নাজাসাতে হুকমী। উভয়ের হুকুম-আহকাম ও মাসয়ালা পৃথক পৃথক । পবিত্রতা অর্জন করার জন্য তার হুকুম ও মাসয়ালাগুলো ভালো করে বুঝেসুঝে তা মনে রাখা অত্যন্ত জরুরী ।
(১).নাজাসাতে হাকীকী
নাজাসাতে হাকীকী হচ্ছে ঐ সব মল-মূত্র ও ময়লা জিনিস যা সাধারণত মানুষের ঘৃণার উদ্রেক করে এবং প্রত্যেকে সেসব থেকে নিজের শরীর জামা- কাপড় ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিস পত্রকে রক্ষা করতে চায়। শরীয়তও এসব থেকে দূরে থাকার এবং পাক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। যেমন- মল, মূত্র, বীর্য, রক্ত ইত্যাদি। এ আবার দু’প্রকারের- (ক).নাজাসাতে গালিযা। (খ).নাজাসাতে খফিফা ৷
(ক).নাজাসাতে গালিযা
ঐসব জিনিসকে নাজাসাতে গালিযা বলা হয় যাদের নাপাক হওয়া সম্পর্কে কোনো প্রশ্নই থাকতে পারে না। মানুষের স্বভাব প্রকৃতি সেগুলোকে ঘৃণা করে এবং শরীয়ত সেগুলোকে নাপাক বলে ঘোষণা করে। এ সবের অপবিত্রতা অসুচিতা খুব তীব্রভাবে অনুভূত হয় এবং সেজন্য শরীয়তে এ সবের জন্য কঠোর নির্দেশ রয়েছে । নিম্নে নাজাসাতে গালিযার কিছু বর্ণনা করা হচ্ছে :-
● শুকর । তার প্রতিটি বস্তুই নাজাসাতে গালিযা । সে জীবিত হোক অথবা মৃত ।
● মানুষের পেশাব, পায়খানা, বীর্য, প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে নির্গত যে কোনো তরল বস্তু, সকল পশুর বীর্য এবং ছোট ছেলে-মেয়েদের পেশাব-পায়খানা ।
● মানুষ অথবা পশুর রক্ত ।
● বমি যে কোনো বয়সের মানুষের হোক ।
● মেয়েদের প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে নির্গত রক্ত।
● মেয়েদের প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে নির্গত কোনো তরল পদার্থ ।
● ক্ষতস্থান থেকে নির্গত পুঁজ, রস অথবা অন্য কোনো তরল পদার্থ ।
● যেসব পশুর ঝুটা নাপাক তাদের ঘাম ও লালা ।
● যবেহ করা ব্যতীত যেসব পশু মারা গেছে তাদের গোশত, চর্বি ইত্যাদি এবং চামড়া নাজাসাতে গালিযা । অবশ্য চামড়া দাবাগত (Tanning) করা হলে তা পাক । ঠিক তেমনি যার মধ্যে রক্ত চলাচল করে না যেমন শিং, দাঁত, ক্ষুর ইত্যাদি পাক ।
● হারাম পশুর-জীবিত অথবা মৃত—দুধ এবং মৃত পশুর (হালাল অথবা হারাম) দুধ ।
● মৃত পশুর দেহ থেকে নির্গত তরল পদার্থ ।
● নাপাক বস্তু থেকে নির্গত নির্যাস অথবা ঐ ধরনের কোনো বস্তু ।
● পাখী ব্যতীত সকল পশুর পেশাব পায়খানা। গরু, মহিষ, হাতি, ঘোড়া, গাধা, খচ্চর প্রভৃতির গোবর, উট, ছাগল প্রভৃতির লাদ । উড়তে পারে না এমন পাখী, যেমন হাঁস-মুরগী ইত্যাদির পায়খানা। সকল হিংস্র পশুর পেশাব পায়খানা ।
● মদ এবং অন্যান্য তরল মাদক দ্রব্য ৷
● সাপের চামড়া ।
● মৃত ব্যক্তির মুখের লালা ।
● শহীদ ব্যক্তির দেহ থেকে নির্গত রক্ত যা প্রবাহিত হয় ।
(খ).নাজাসাতে খফিফা
ঐসব জিনিস নাজাসাতে খফিফা যার ময়লা কিছুটা হালকা । শরীয়তের কোনো কোনো দলিল প্রমাণ থেকে তাদেরকে পাক হওয়ার সন্দেহ হয় । এজন্য শরীয়তে তাদের সম্পর্কে হুকুমও লঘু । নিম্নে এমন সব জিনিসের নাম করা হচ্ছে যাদের নাজাসাত নাজাসাতে খফিফা।
● হালাল পশুর পেশাব, যেমন- গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি ।
● ঘোড়ার পেশাব ।
● হারাম পাখীর মল, যেমন-কাক, চিল,বাজ প্রভৃতি । অবশ্য বাদুরের পেশাব- পায়খানা পাক।
● হালাল পাখীর পায়খানা যদি দুর্গন্ধযুক্ত হয় ।
● নাজাসাতে খফিফা যদি নাজাসাতে গালিয়ার সাথে মিশে যায় তা গালিযার পরিমাণ যতোই কম হোক না কেন, তথাপি সব নাজাসাতে গালিযা হয়ে যাবে।
(২).নাজাসাতে হুকমী
নাপাক হওয়ার এমন অবস্থা যা দেখা যায় না, বরং শরীয়তের মাধ্যমে জানা যায় তাকে নাজাসাতে হুকমী বলে, যেমন অযু না থাকা, গোসলের প্রয়োজন হওয়া । একে হাদাসও বলে ।
আরো পড়ুন :
নেফাসের সর্বোচ্চ সময়সীমা কত দিন
ট্যাগ সমূহ : নাজাসাত কত প্রকার ও কী কী,নাজাসাত কত প্রকার,নাজাসাত কাকে বলে,নাজাসাত অর্থ কি,নাজাসাত কত প্রকার কি কি,নাজাসাত কী, নাজাসাত দূর করার উপায়,নাজাসাত বলতে কি, নাজাসাত অর্থ কি,নাজাসাত কত প্রকার,নাজাসাত শব্দের অর্থ কি,নাজাসাত কাকে বলে,নাজাসাতে হাকিকি কাকে বলে,নাজাসাতে গলিজা,নাজাসাতুন শব্দের অর্থ কি,নাজাসাতে হুকমি, নাজাসাত কত প্রকার ও কী কী,নাজাসাত কি,নাজাসাতে হাকিকি কি |