তাওয়াফ কি/ তাওয়াফ কত প্রকার/ তাওয়াফ করার নিয়ম

তাওয়াফ শব্দের অর্থ কি,তাওয়াফ কি,তাওয়াফরে দোয়া,তাওয়াফ নামের অর্থ কি,তাওয়াফ জিয়ারত,তাওয়াফ কত প্রকার,তাওয়াফ করার নিয়ম,তাওয়াফ যিয়ারত,তাওয়াফরের নিয়ম,তাওয়াফ নামের অর্থ কি,জাহেলি যুগে কুরাইশরা কিভাবে কাবা ঘর তাওয়াফ করতো,তাওয়াফ,তাওয়াফের দোয়া সমূহ,তাওয়াফে কুদুম অর্থ কি,তাওয়াফ কত প্রকার,তাওয়াফ করার দোয়া,

তাওয়াফ কি ও তাওয়াফ কত প্রকার

তাওয়াফ কী?
হজ্জ ও ওমরার সময় মুসলিমরা কাবার চারপাশে ঘড়ির কাটার বিপরীতদিকে সাতবার ঘোরে যা তাওয়াফ নামে পরিচিত। তাওয়াফ শুরুর পূর্বে হাজরে আসওয়াদে চুমু দেয়া নিয়ম। তবে ভিড়ের কারণে এর কাছে যাওয়া সম্ভব না হলে হাত দিয়ে ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করা যায়।

তাওয়াফের প্রকার ও তার হুকুমাবলী
বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ছয় প্রকার এবং প্রত্যেকের হুকুম পৃথক পৃথক।

১. তাওয়াফে যিয়ারত :
একে তাওয়াফে ইফাদা এবং তাওয়াফে হজ্জও বলে। তাওয়াফে যিয়ারত হজ্জের অন্যতম রুকন। কুরআন বলে- وليطوفوا بالبيت العتيق এ প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করা উচিত। ইমামগণ এ ব্যাপারে একমত যে, এখানে তাওয়াফে যিয়ারতের কথাই বলা হয়েছে, যা আরাফাতে অবস্থানের পর দশ তারিখে করা হয়। কোনো কারণে যিলহজ্জের দশ তারিখে করতে না পারলে ১১/১২ তারিখেও করা যেতে পারে।

২. তাওয়াফে কুদুম :
একে তাওয়াফে তাহিয়্যাও বলে। মক্কা প্রবেশের পর প্রথম যে তাওয়াফ করা হয় তাকে তাওয়াফে কুদুম বলে । এ তাওয়াফ শুধু তাদের জন্য ওয়াজিব যারা মীকাতের বাইরের অধিবাসী। পরিভাষায় একে আফাকী বলে।

৩. তাওয়াফে বেদা :
বায়তুল্লাহ থেকে বিদায় নেবার সময় যে শেষ তাওয়াফ করা হয় তাকে বিদায়ী তাওয়াফ বা তাওয়াফে সদর বলে । এ তাওয়াফও আফাকীর (মীকাতের বহিরাগত) জন্যে ওয়াজিব। এ তাওয়াফের পর মুলতাযেমের সাথে নিজেকে জড়িত করে বুক ও ডান গাল তাতে লাগিয়ে এবং ডান হাতে বায়তুল্লাহর পর্দা ধরে একান্ত বিনয় সহকারে ও অশ্রু কাতর কণ্ঠে দোয়া করা উচিত। এ হচ্ছে বিদায়ের সময় এবং বলা যায় না যে আবার কখন এ সৌভাগ্য হবে। এ তাওয়াফ সম্পর্কে নবী (স)-এর হেদায়াত হচ্ছে- কেউ যেন বিদায়ী তাওয়াফ না করে বায়তুল্লাহ থেকে ফিরে না যায়। শুধু মাত্র ঐ মেয়েলোকের জন্যে অনুমতি আছে যার হায়েয হয়েছে।-(বুখারী)

৪. তাওয়াফে উমরাহ :
এ হচ্ছে উমরার তাওয়াফ যা উমরার রুকন। এ তাওয়াফ ছাড়া উমরাহ হবে না।

৫. তাওয়াফে নযর : কেউ তাওয়াফে নযর মানলে তা করা ওয়াজিব।
৬. নফল তাওয়াফ : এটা যে কোনো সময়ে করা যায়। মক্কায় যতোদিন থাকার সুযোগ হয়। বেশী বেশী তাওয়াফ করার চেয়ে বড়ো সৌভাগ্য আর মানুষের কি হতে পারে ?

তাওয়াফের ওয়াজিবসমূহ
তাওয়াফের মধ্যে নয়টি জিনিস যত্ন সহকারে পালন করা ওয়াজিব।
১. নাজাসাতে হুকমী :
অর্থাৎ হাদাসে আসগার ও হাদাসে আকবার থেকে পাক হওয়া। মেয়েদের জন্যে হায়েয, নেফাস অবস্থায় তাওয়াফ করা জায়েয নয়। হযরত আয়েশা (রা)-এর হজ্জের সময় মাসিক ঋতু শুরু হলে তিনি কাঁদতে থাকেন। নবী (স) বলেন, এতে কাঁদার কি আছে ? এ এমন জিনিস যা আদম কন্যাদের রক্তের সাথে সম্পর্কিত। তুমি ওসব কাজ করতে থাক যা হাজীদের করতে হয়। কিন্তু বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে না যতোক্ষণ না তুমি তার থেকে পাক হবে।-(বুখারী, মুসলিম)

২. সতরে আওরত :
অর্থাৎ শরীরের ঐসব অংশ ঢেকে রাখা যা ঢাকা জরুরী। নবী (স) বলেন :لايطوف بالبيت عريان অর্থাৎ উলংগ হয়ে (সতর খুলে) কেউ যেন তাওয়াফ না করে।-(বুখারী)
৩. হিজরে আসওয়াদের ইস্তেলাম থেকে তাওফায় শুরু করা।
৪. তাওয়াফ ডান দিক থেকে শুরু করা। হযরত জাবের (রা) বলেন, নবী (স) মক্কায় তশরিফ আনার পর সর্বপ্রথম তিনি হিজরে আসওয়াদের নিকট গেলেন, তার ইস্তেলাম করলেন এবং তারপর ডান দিক থেকে তাওয়াক শুরু করলেন।

৫. পায়ে হেঁটে তাওয়াফ করা। ওজর থাকলে সওয়ারীতে তাওয়াফ জায়েয। নফল তাওয়াফ বিনা ওজরে সওয়ারিতে জায়েয। কিন্তু পায়ে হেঁটে করাই ভালো।
৬. তাওয়াফের প্রথম চার ফরয চক্করের পর বাকী তিন চক্কর (শওত) পুরো করা।

৭. সাত তাওয়াফ শেষ করার পর দু’ রাকায়াত নামায পড়া। হযরত জাবের (রা) বলেন, আমরা নবী (স)-এর সাথে বায়তুল্লাহ পৌঁছার পর তিনি হিজরে আসওয়াদের ইস্তেলাম করলেন। প্রথম তিন চক্করে তিনি রমল করলেন, বাকী চারটি সাধারণভাবে করলেন। তারপর তিনি মাকামে ইবরাহীমের দিকে অগ্রসর হলেন এবং এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন ঃ واتخذوا من مقام ابراهيم مصلى (এবং মাকামে ইবরাহীমকে স্থায়ী জায়নামায বানিয়ে নাও)। তারপর তিনি এমনভাবে দাঁড়ালেন যে মাকামে ইবরাহীম তাঁর ও বায়তুল্লাহর মধ্যখানে রইলো তারপর তিনি নামায পড়লেন।-(মুসলিম)

৮. হাতীমের বাইরে থেকে তাওয়াফ করা যাতে করে হাতীম তাওয়াফের মধ্যে শামিল হয়।
৯. ইহরামের নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে দূরে থাকা।

তাওয়াফের দোয়া
খানায়ে কা’বা তাওয়াফ করার জন্যে হিজরে আসওয়াদের নিকট পৌছলে بسم الله والله اكبر বলে নিম্নের দোয়া পড়তে হয় :
اللَّهُمَّ إِيمَانًا بِكَ وَتَصْدِيقًا بِكِتَابِكَ وَوَقاءَ بِعَهْدِكَ وَاتَّبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَصلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

“হে আল্লাহ! আপনার ওপর ঈমান এনে, আপনার কিতাবের সত্যতা স্বীকার করে, আপনার নবী (স:)-এর সুন্নাতের অনুসরণে (এ ইস্তেলাম এবং তাওয়াফের কাজ শুরু করছি)।”

তাওয়াফের সময় আস্তে আস্তে এ দোয়া পড়তে হবে :
سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله أكبر ولا حول ولا قوة الا باالله

“আল্লাহ সকল ত্রুটি-বিচ্যুতির ঊর্ধে, সকল প্রশংসা তার জন্যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, এবং আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি নেই যে সৎপথে চালাতে পারে এবং কোনো শক্তি নেই যে পাপাচার থেকে বাঁচাতে পারে।”

যখন রুকনে ইয়ামেনী পৌছবে তখন রুকনে ইয়ামেনী এবং হিজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে পড়বে।
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حسنة وَقِنَا عذاب النارِ وَادْخِلْنَا الْجَنَّةَ مَعَ الْأَبْرَارِ
নিম্নের দোয়াও পড়বে-
اللَّهُمَّ فَنَعْنِي بِمَا رَزَقْتَنِي وَبَارِكْ لِى فِيهِ وَاخْلُفْ عَلَى كُلِّ غَائِبَةٍ لِي بِخَيرٍ
“হে আল্লাহ ! তুমি আমাকে তৃপ্তি দান কর যাকিছু তুমি আমাকে দিয়েছ তার ওপর এবং তার মধ্যেই আমাকে বরকত দান কর। আর প্রত্যেকটি অদৃশ্য বস্তুতে তুমি মংগল ও কল্যাণসহ তত্ত্বাবধায়ক হয়ে যাও।”

তার সাথে নিম্নের দোয়াও পড়া ভালো ঃ
لا إله إلا الله وحده لاشريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيئ قدير
“আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক ও একক তাঁর কোনো শরীক নেই। শাসন কর্তৃত্ব ও প্রশংসা সব তাঁরই এবং তিনি সকল কিছুর ওপর শক্তিমান।

তাওয়াফের সুন্নত কার্যাবলী
১। তাওয়াফের শুরুতে ‘হাজরে আসওয়াদ’ এর দিকে মুখ করা।
২। সম্ভব হলে ‘হাজের আসওয়াদ’ চুম্বন করা। নতুবা হাত দিয়ে দূর থেকে ইশারা করা। আর মুখে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ বলা।

৩। যে তাওয়াফের পরে ‘সাঈ’ আছে, তাতে ‘ইজতেবা’ করা। অর্থাৎ ইহরামের চাদরের (উপরের অংশের) দুই মাথা ডান বগলের নিচ দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের ওপর ফেলে দেয়া।
৪। হাজের আসওয়াদ বরাবর দাঁড়িয়ে তাকবিরে তাহরিমার মতো উভয় হাত সিনা পর্যন্ত তোলা।
৫। ‘সাঈ’-যুক্ত ‘তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করা। অথাৎ বীরের মতো হেলে দুলে জোর কদমে (একের পর এক পা ফেলে) চলা।

৬। বাকি চার চক্কর সাধারণ গতিতে (ধীরে ধীরে) সম্পন্ন করা।
৭। প্রত্যেক চক্কর তাওয়াফ শেষ করে এবং শেষ চক্করেরও পরে ‘হাজরে অসওয়াদকে চুম্বন করা। সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারা করে- ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহ আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ দোয়াটি পাঠ করা এবং ৩ নম্বর নিয়মের মতো দাঁড়িয়ে ইশারা করে ‘তাওয়াফ’ শেষ করা।

আরো পড়ুন :

হজ্জ কাকে বলে

হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী

হজ্জ সহীহ হওয়ার শর্ত কয়টি

হজ্জের মিকাত কয়টি ও কি কি

ইহরাম কি ও ইহরাম বাধার নিয়ম

বাংলাদেশের মীকাত কি

হজ্জের ফরজ কয়টি ও কি কি

হজ্জ কি প্রত্যেক বছর পালন করতে হবে

হজ্জ কত হিজরীতে ফরজ হয়েছে ?

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ্জে মাবরুর কাকে বলে

ট্যাগ সমূহ : তাওয়াফ শব্দের অর্থ কি,তাওয়াফ কি,তাওয়াফরে দোয়া,তাওয়াফ নামের অর্থ কি,তাওয়াফ জিয়ারত,তাওয়াফ কত প্রকার,তাওয়াফ করার নিয়ম,তাওয়াফ যিয়ারত,তাওয়াফরের নিয়ম,তাওয়াফ নামের অর্থ কি,জাহেলি যুগে কুরাইশরা কিভাবে কাবা ঘর তাওয়াফ করতো,তাওয়াফ,তাওয়াফের দোয়া সমূহ,তাওয়াফে কুদুম অর্থ কি,তাওয়াফ কত প্রকার,তাওয়াফ করার দোয়া,তাওয়াফ শব্দের অর্থ কি,তাওয়াফ কি,তাওয়াফরে দোয়া,তাওয়াফ নামের অর্থ কি,তাওয়াফ জিয়ারত,তাওয়াফ কত প্রকার,তাওয়াফ করার নিয়ম,তাওয়াফ যিয়ারত,তাওয়াফরের নিয়ম,তাওয়াফ নামের অর্থ কি,জাহেলি যুগে কুরাইশরা কিভাবে কাবা ঘর তাওয়াফ করতো,তাওয়াফ,তাওয়াফের দোয়া সমূহ,তাওয়াফে কুদুম অর্থ কি,তাওয়াফ কত প্রকার,তাওয়াফ করার দোয়া

,

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top