টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার
টাইফয়েডের জীবানুকে সালমোনেল্লা টাইফি বলা হয়। এটি আমাদের মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। প্রায় ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত এরা আমাদের অন্ত্রে ঘর বানায়। এরপর অন্ত্রের চামড়ার মাধ্যমে এটি রক্তে পৌঁছে যায়। রক্তের মাধ্যমে এটি শরীরের নানা অংশে ছড়িয়ে যায়। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাল্মোনেলা টাইফীর সাথে লড়াই করতে পারে না। কারণ এই জীবানু আমাদের কোষের প্রতিরোধ প্রণালীকে প্রভাবিত না করে, সুরক্ষিত ভাবে বাস করে।
আরো পড়ুন : জ্বর সর্দি কাশির ঔষধের নাম
টাইফয়েডের লক্ষণ, প্রথম দিকে সামান্য জ্বর দিয়ে শুরু হয়, এবং পরে মাথা ব্যথা, শরীরে নানা ব্যথা ইত্যাদি হতে শুরু করে। আজ আমরা টাইফয়েড জ্বর কী?,টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার সর্ম্পকে জানবো ইনশাআল্লাহ।
টাইফয়েড জ্বর কী?
টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড জ্বরকে একত্রে আন্ত্রিক জ্বর বলা হয়ে থাকে। টাইফয়েড জ্বর একটি অত্যন্ত পরিচিত সংক্রামক রোগ যা সালমোনেলা এন্টেরিকা এর টাইফি, প্যারাটাইফি A, B, এবং C নামক বিভিন্ন প্রজাতির দ্বারা ঘটে। প্রথমদিকে এটা পাচনতন্ত্রকে আক্রান্ত করে, তবে যদি এর সঠিক চিকিৎসা না করা হয়, এই অবস্থা আরও গুরুতর দিকে চলে যেতে পারে এবং জীবাণুগুলি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। সময়মত যদি চিকিৎসা করা না যায় তাহলে এটা গুরুতর জটিল থেকে জটিলতার দিকে চলে যেতে পারে যা মারাত্মক আকার নেয় ৷
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ
১. টাইফয়েড এমন এক রোগ যার লক্ষণ ১ থেকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়তে থাকে এবং ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে।
২. খিদে না পাওয়া-এই রোগে খিদে না পাওয়ার সমস্যাও দেখা যায়, এই জন্য টাইফয়েড হলে কিছু খাওয়ার ইচ্ছা থাকে না।
৩. প্রচন্ড জ্বর হওয়া-আমরা প্রথমেই বলে দিয়েছি যে টাইফয়েডে প্রচন্ড জ্বর থাকে, এটা ১০৪ ডিগ্রীর ফারেনহাইটের বেশিও হতে পারে।
৪. বুকে কফ জমা-টাইফয়েডের জ্বরে অনেক মানুষের বুকে কফ জমে যায়। এই সময় বুকে কফ জমে গেলে নানান সমস্যা সৃষ্টি হয়।
৫. ব্যথা এবং অসস্তির সমস্যা-টাইফয়েড হলে রোগীর সারা শরীরে ব্যথা হয় এবং এই ব্যথার কারণে অসস্তি বোধ করতে পারেন।
৬. অলসতা আসা-এই সময় হওয়া নানা সমস্যার মধ্যে একটি হল অলসতা আসা। মানে টাইফয়েডে আপনার শরীরে অলসতা আসবে। আপনার কোনো কিছু কাজ করতে ইচ্ছা যাবে না।
৭. মাথার যন্ত্রণা হওয়া-মাথার যন্ত্রণা হওয়াও টাইফয়েডের লক্ষণের মধ্যে পড়ে।টাইফয়েডে মাথা ব্যথা হওয়া বা মাথা ভারী হয়ে যাওয়া খুব সাধারণ।
৮. পেটে ব্যথা হওয়া-টাইফয়েডের জ্বরে পেটে ব্যথার সমস্যা হতে পারে। এই সময় পেটে ক্রমাগত ব্যথা হতে থাকে।
৯. পায়খানা হওয়া-টাইফয়েডে পায়খানার সমস্যাও দেখা যায়। পায়খানা হবার কারণে শরীর ড্রিহাইড্রেট অর্থাৎ শরীরে জলের মাত্রা কমে যায়।
টাইফয়েড জ্বরের প্রতিকারের উপায়
টাইফয়েড জ্বর থেকে প্রতিকার পেতে গেলে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অবশ্যই মেনে চলুন –
টাইফয়েড হলে কি কি খাবেন এবং কি কি খাবেন না —
- সরাসরি কলের জল পান করা বন্ধ করতে হবে৷ রোগ প্রতিরোধের জন্য বিশুদ্ধ জল পান করুন। প্রয়োজনে জল ফুটিয়ে খান৷
- বাইরে বেরোলে প্যাকেজড জল কিনে খান। কলের বা কুয়োর জল কোনোভাবেই ব্যবহার করবেন না।
- আইসকিউব, স্টিক আইসক্রিম ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
- পাস্তুরাইজড ডেয়ারি প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ডিম অনেকক্ষণ ধরে সেদ্ধ করে তারপর খান ৷
- দুধ, গরম কফি, গরম চা, সঠিক মাত্রায় পান করা টাইফয়েড প্রতিরোধে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়।
- কোনো খাবারই কিনেই খাবেন না , ভালো ভাবে ধুয়ে, হাত ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে খান।
- রাস্তার ধারে ঠেলাগাড়িতে খোলা অবস্থায় রাখা খাবার এড়িয়ে চলুন।
- যেকোনো সবজি ভালো ভাবে রান্না করে খান, কাঁচা অবস্থায় কোনোভাবেই খাবেন না৷
- মাছ, মাংস অথবা অন্য কিছু সঠিক ভাবে রান্না করে গরম অবস্থায় খান ৷
- দীর্ঘক্ষণ ধরে কেটে রাখা স্যালাড খাবেন না।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন
- বাইরে বেরোলে, খাওয়ার আগে, চোখে মুখে হাত দেওয়ার আগে ভালোভাবে সাবান দিতে হাত ধুয়ে নিন। সাবান ব্যবহার করতে না পারলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
- জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সব সময় পরিষ্কার পোশাক পরুন।
- ঘরের জিনিসপত্র ভালো করে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে এবং টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র একেবারে আলাদা করে রাখতে হবে।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবহার করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন সেখানে ময়লা বা নোংরা জল জমে না থাকে।
- টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যাবহৃত শৌচাগার ভালো করে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
- আক্রান্ত ব্যক্তিকে খোলামেলা ও পরিষ্কার বিছানায় রাখতে হবে।
ট্যাগ : টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার,টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ,টাইফয়েডের লক্ষণ,টাইফয়েড এর লক্ষণ,টাইফয়েড জ্বর কী,টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার,টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ,টাইফয়েডের লক্ষণ,টাইফয়েড এর লক্ষণ,টাইফয়েড জ্বর কী |