জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
জ্বর খুব বেশী হলে জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। কিন্তু জ্বর ৩৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বা এর নিচে হলে এখনই ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই এবং এটা নিয়ে ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। এর পরিবর্তে শরীরের তাপমাত্রা কমাতে কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করতে পারেন।
১. জ্বর অনুভূত হলে সবার আগে বিশ্রামের প্রয়োজন । এতে করে সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যাবে। জ্বর অনুভূত হলে শরীর যথেষ্ট দুর্বল থাকে। তাই ঠিকঠাক বিশ্রাম নিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের প্রয়োজন। বাড়িতে চেষ্টা করুন পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নেয়ার।
২. কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন। কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যাবে। কিন্তু ঠান্ডা পানিতে গোসল করে শরীরকে শীতল করার চেষ্টা করবেন না। কারণ জ্বর নিয়ে ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গে রক্ত ছুটে যাবে ও মূল তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। অন্যদিকে ত্বক শীতল হয়ে পড়বে ও কাঁপুনি শুরু হবে।
আরো পড়ুন : ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
৩. জ্বর হলে শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমানোর অন্যতম কার্যকরী এবং সহজ পদ্ধতি হলো পানিপট্টি দেওয়া। সেজন্য একটি পরিষ্কার রুমাল ভাঁজ করে সেটি পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে নিন। এরপর ভেজা রুমালটি রোগীর কপালের উপর দিয়ে রাখতে হবে। এভাবে মিনিট দুয়েক পর রুমালটি পুনরায় ভিজিয়ে একইভাবে কপালের উপর দিয়ে রাখতে হবে। এভাবে কয়েকবার করলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
৪. স্পঞ্জ বাথও নিতে পারেন। বগল ও কুঁচকির মতো উচ্চ তাপমাত্রার অংশে ঠান্ডা পানিতে ভেজা স্পঞ্জ বা নরম কাপড় দিয়ে মুছে নিলে জ্বর কমে আসবে।
৫. এক চা চামচ মধু, অর্ধেকটা লেবুর রস ও এককাপ গরম পানি নিন। এবার সব উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে নিন ভালো করে। এই মিশ্রণ দিনে দুইবার খান। মধুতে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা শরীরের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এর ফলে ভাইরাসজনিত জ্বর কমানো সহজ হবে। ভাইরাস জনিত রোগের ক্ষেত্রে লেবুর রস ও মধু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এগুলো শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
৬. গোসল করতে না চাইলে কপাল ও ঘাড়ের ওপর ঠান্ডা পানিতে ভেজা নরম কাপড় রাখলেও জ্বর কমবে।
৭. শরীরকে শীতল করার একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে ঘাম নিঃসরণ। তাই শরীর থেকে ঘাম ঝরিয়ে জ্বর কমানোর প্রত্যাশা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ঘাম নিঃসরণকে উদ্দীপ্ত করতে আদা চা পান করতে পারেন। এক মগ পানিতে আধ চা চামচ আদা কুচি ঢেলে ফুটিয়ে নিন। এরপর এই পানীয়কে ছেঁকে কুসুম গরম অবস্থায় পান করুন।
৮. সর্দি-কাশি বা জ্বরের মতো সমস্যায় মধু খুবই উপকারী। অসুখ-বিসুখে মধুর ব্যবহার বেশ পুরনো। মধু ও তুলসীপাতা গলার কফ পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। সর্দি-কাশি হলে নিয়মিত সকালে মধু আর তুলসিপাতা একসাথে খেয়ে নিন। কিছুক্ষণ পরেই দেখবেন গলা পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
৯. জ্বর আসলে খাবারে বেশি করে ঝাল মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করুন। ঝাল মরিচের একটি প্রধান উপাদান হলো ক্যাপসাইসিন।এটি শরীর থেকে ঘাম ঝরিয়ে জ্বর কমাতে পারে।
১০. সর্দিকাশির বা জ্বরের সময় কোনোভাবেই যেন বুকে কফ বসে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর জন্য খেতে হবে প্রচুর তরল। বিশুদ্ধ পানি পানের পাশাপাশি ফ্রুট জুস বা স্যুপ জাতীয় খাবার খান নিয়মিত। তরল খাবার কফকে সহজে বুকে বসতে দেয় না।
১১. জ্বরের একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া টোটকা হলো ওয়েট-শক ট্রিটমেন্ট। বিছানায় যাওয়ার পূর্বে প্রথমে গরম পানিতে পা ভিজিয়ে নিন। তারপর এক জোড়া কটনের মোজাকে ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে পরে নিন। এর ওপর পশমের একজোড়া শুকনো মোজা পরুন। এই প্রক্রিয়াতে পায়ের দিকে রক্ত ছুটে আসবে ও জ্বর কমবে।
১২. জ্বর হলে তরল পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বেশি খাবার একসঙ্গে খাওয়ানো উচিত নয়। কেননা, এটি শরীরের তাপ উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। বদহজম হতে পারে।
১৩. পায়ের দিকে রক্ত টেনে আনার আরেকটি উপায় হচ্ছে মাস্টার্ড ফুটবাথ। চার মগ কুসুম গরম পানিতে দুই চা চামচ সরিষা গুঁড়া মিশিয়ে পা দুটিকে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। এতেও জ্বর কমে আসে।
১৪. জ্বর হলে কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন। তবে এই গোসল খুব দ্রুত করতে হবে, বেশি সময় নিয়ে করা যাবে না। আর জ্বর হলে ঠান্ডা পানিতে একদমই গোসল করবেন না। তবে গোসল করতে না চাইলে স্পঞ্জ বাথ নিতে পারেন। এক্ষেত্রে সারা শরীরে ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে।
১৫. একটি প্রাচীন জ্বরের টোটকা হচ্ছে চাদরকে ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে শরীরে মুড়ে নেয়া। কিন্তু আজকের চিকিৎসকেরা শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমানোর বিপক্ষ বলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন। চাদরটি শরীরে মুড়িয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে খুলে ফেলুন।
১৬. আদার চা জ্বর কিংবা সর্দি-কাশি থেকে সহজে মুক্তি দেয়। আদা চা তৈরি করতে হলে চায়ের লিকারের মধ্যে চিনি ও আদার ছোট ছোট কুচি মেশান। এরপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন চা। চাইলে মেশাতে পারেন লেবুর রস। এটা চায়ের ভিটামিন-সি যোগ করে। এই আদা চা খেলে দুর্বলতা কেটে শরীরকে সুস্থ ও সতেজ করে তোলে।
১৭. জ্বরে শরীর সহজেই পানিশূন্য হতে পারে। তাই প্রতিদিন ৮-১২ গ্লাস পানি পান করুন।
১৮. জ্বরের সময় সুতি কাপড়ের জামা পরা দরকার, যাতে ভেতর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়। দরজা-জানালা খুলে দেবেন, পাখা ছেড়ে দেবেন, যাতে বাতাস চলাচল করে।
১৯. জ্বরে কমলার রস ও অন্যান্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলের রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। ভিটামিন সি ইমিউন সিস্টেমকে ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
ট্যাগ : জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়,জ্বর হলে করণীয়,দ্রুত জ্বর কমানোর উপায়,জ্বর কমানোর উপায়,জর কমানোর উপায়,জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়,জ্বর হলে করণীয়,দ্রুত জ্বর কমানোর উপায়,জ্বর কমানোর উপায়,জর কমানোর উপায়,জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়,জ্বর হলে করণীয়,দ্রুত জ্বর কমানোর উপায়,জ্বর কমানোর উপায়,জর কমানোর উপায় |