জমি বন্ধক রাখা কি জায়েজ
মানবসমাজ পরস্পরের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। এজন্য ঋণ ও বন্ধক পদ্ধতি ইসলাম অনুমোদন করে। আর এগুলো আদিকাল থেকে প্রচলিত। তবে তথ্য বন্ধকের ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। সব জিনিসই বন্ধক রাখা যায় না, এ ব্যাপারে কিছু শর্তারোপ করা হয়েছে। কোন কোন জিনিস বন্ধক রাখা বৈধ এবং কোন কোন জিনিস বৈধ নয়; বন্ধকি বস্তু, বন্ধকদাতা ও বন্ধক গ্রহীতা একাধিক হলে তার বিধান কী, এসব বিষয় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা উপস্থাপিত হলো।
আরো পড়ুন : কসর নামাজের নিয়ম ও কসর নামাজের বিধান
আরবিতে বন্ধকদাতাকে راهـن বলা হয়। আর যার কাছে বন্ধক রাখা হয়, তাকে مرتهن এবং বন্ধককৃত বস্তুকে مرهون বলে।
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়- পরিশোধ করার সময় ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে কোনো বস্তু বন্ধক রাখাকে رهـن বলা হয়। যেমন- কাউকে এক হাজার টাকা প্রদান সাপেক্ষে একটি ঘড়ি বন্ধক রাখা। অর্থাৎ শর্তসাপেক্ষে কোনো বস্তু আটকিয়ে রাখা, যাতে তা থেকে দাবি পূরণ করা যায়।
যেসব জিনিস বন্ধক রাখা বৈধ
যেসব জিনিস বন্ধক রাখা যায়, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১. জমির ফসলসহ জমি বন্ধক দেয়া বৈধ।
২. ইমাম আযম (র)-এর মতে, গাছ ব্যতীত শুধু জমি বন্ধক রাখা বৈধ।
৩. খেজুর গাছ উদ্গত হওয়ার স্থানসহ رهن বৈধ।
৪. ফলসহ খেজুর বা এ জাতীয় গাছ স্থানসহ বন্ধক রাখা বৈধ।
৫. বাড়ির মালামালসহ বাড়ি বন্ধক রাখা বৈধ।
৬. মহর, خلع ও ইচ্ছাকৃত হত্যার অর্থদণ্ডের বিনিময়ে رهن বৈধ।
৭. বাইয়ে সালাম-এর মূলধনের বিনিময়ে বন্ধক রাখা বৈধ।
৮. বাইয়ে সরফ-এর ثمن তথা মূল্যের বিনিময়ে বন্ধক রাখা বৈধ।
৯. যে সকল মাল নষ্ট হলে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, অনুরূপ বস্তু দ্বারা অথবা মূল্য দ্বারা
এগুলোর বিনিময়ে বন্ধক গ্রহণ করা বৈধ।
১০. যে সকল জিনিস ভাগ করা যায়, সেগুলো বন্ধক রাখা বৈধ।
১১. যেসব পণ্যের ব্যাপারে বাইয়ে সালাম করা হয়েছে, সেগুলোর বিনিময়ে বন্ধক রাখা বৈধ।
১২. যদি অলী এতিমের ভরণপোষণের জন্য এতিমের কোনো সম্পদ বন্ধক রাখে, তবে তা বৈধ।
১৩. পিতা নিজের ও নাবালেগ সন্তানের ঋণের কারণে নাবালেগের সম্পদ বন্ধক রাখতে পারবে।
১৪. ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে এতিমের মাল দিয়ে বন্ধকি লেনদেন বৈধ।
১৫. পরিমাপযোগ্য ও ওজনযোগ্য বস্তু বন্ধক রাখা বৈধ।
১৬. দীনার ও দিরহাম বন্ধক রাখা বৈধ।
১৭. পিতা তার নিজের ঋণের বিনিময়ে নাবালেগ পুত্রের গোলামকে বন্ধক রাখা বৈধ।
যেসব জিনিস বন্ধক রাখা জায়েয নেই
যেসব বস্তু বন্ধক রাখা বৈধ নয়, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো নিম্নে প্রদত্ত হলো-
১. যেসব বস্তু বিভাজ্য নয়, এ জাতীয় বস্তু বন্ধক রাখা বৈধ নয় ।
২. খেজুরবৃক্ষ ব্যতিরেকে শুধুমাত্র খেজুর বন্ধক রাখা অবৈধ ।
৩. জমি বাদ দিয়ে শুধু জমির ফসল বন্ধক রাখা বৈধ নয়।
৪. জমি বাদ দিয়ে শুধু জমিস্থ বৃক্ষ বন্ধক দেয়া অবৈধ।
৫. গাছ বা ফসলাদি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র জমি বন্ধক দেয়া বৈধ নয়।
৬. ফলমূল বাদ দিয়ে শুধু গাছ বন্ধক রাখা বৈধ নয়।
৭. অট্টালিকা বা স্থাপনা ছাড়া শুধুমাত্র বাড়ি বন্ধক রাখা বৈধ নয়।
৮. আমানতি মাল আরিয়াত, মুদারাবাত এবং অংশীদারি মালের বিনিময়ে বন্ধক রাখা অবৈধ ।
৯. যে মাল বিনষ্ট হওয়ার কারণে ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হয় না, উক্ত মালের বিনিময়ে বন্ধক অবৈধ।
১০. رهن بالدرك বৈধ নয়। আর এই رهن بادرك হলো বিক্রীত মাল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তৃতীয় ব্যক্তি কর্তৃক ক্রেতার কাছে কোনো বস্তু বন্ধক রাখা। এ জাতীয় বন্ধক বৈধ নয়।
১১. বিক্রীত পণ্যের বিনিময়ে বন্ধক রাখা অবৈধ।
১২. আযাদ, মুদাব্বার, মুকাতাব ও উম্মে ওয়ালাদ দাসদাসী বন্ধক রাখা বৈধ নয়।
১৩. الكفالة بالنفس -এর বিনিময়ে বন্ধক গ্রহণ বৈধ নয়।
১৪. কোনো জিনিসের কেসাসের বিনিময়ে বন্ধক গ্রহণ করা বৈধ নয়। কেননা এ বন্ধক গ্রহণের দ্বারা নিজের পাওনা আদায় করা হয় না।
১৫. شفعة-এর বিনিময়ে বন্ধক গ্রহণ বৈধ নয়।
১৬. এমনিভাবে অপরাধী গোলাম বা ঋণগ্রস্ত গোলাম যাকে লেনদেন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, তাদের বিনিময়ে বন্ধক গ্রহণ করা বৈধ নয়।
১৭. কোনো মুসলিম ব্যক্তির জন্য মদ বন্ধক রাখা বৈধ নয়।
১৮. এমনিভাবে অপর কোনো মুসলিম ব্যক্তি বা যিম্মী ব্যক্তির কাছ থেকে মদ গ্রহণ করা বৈধ নয়।
১৯. অলী যদি নাবালকের মাল নিজের কাছে অথবা নিজের সন্তানের কাছে অথবা নিজের ঋণমুক্ত ব্যবসায়ী গোলামের কাছে বন্ধক রাখে, তাহলে তা বৈধ হবে না।
২০. অলী যদি তার কাছে পাওনা এতিমের হকের কারণে এতিমের কাছে নিজের মাল বন্ধক রাখে, তাহলে তা বৈধ হবে না।
ট্যাগ সমূহ : জমি বন্ধক রাখা কি জায়েজ,জমি বন্ধক রাখার নিয়ম,জমি বন্ধক নেওয়া কি জায়েজ,স্বর্ণ বন্ধক রাখা জায়েজ কি,জমি বন্ধক রাখা জায়েজ কিনা,জমি বন্ধক,যেসব জিনিস বন্ধক রাখা বৈধ,যেসব জিনিস বন্ধক রাখা জায়েয নেই,জমি বন্ধক রাখা কি জায়েজ,জমি বন্ধক রাখার নিয়ম,জমি বন্ধক নেওয়া কি জায়েজ,স্বর্ণ বন্ধক রাখা জায়েজ কি,জমি বন্ধক রাখা জায়েজ কিনা,জমি বন্ধক,যেসব জিনিস বন্ধক রাখা বৈধ,যেসব জিনিস বন্ধক রাখা জায়েয নেই, |