খারেজীদের ধর্মীয় মতবাদ
খারেজীরা বহু দল উপদলে বিভক্ত ছিল। তাদের প্রত্যেক দল উপদলের নিজস্ব মতবাদ আছে। তাদের মতবাদগুলো নিম্নরূপ-
ক. ধর্মীয় মতবাদ :
১. নিয়মিত ইসলামী অনুশাসন পালন ঈমানের শর্ত : খারেজীদের মতে, যে মুসলমান নিয়মিত নামায, রোযা ও অন্যান্য বুনিয়াদি কর্তব্য পালন করে না, সে কাফের এবং তার পরিবারবর্গসহ তাকে হত্যা করা কর্তব্য।
২. কবীরা গুনাহকারী জাহান্নামী : কোনো মুসলমান পাপ করার পর তওবা না করে মারা গেলে তাকে অবশ্যই চিরকাল দোযখের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
৩. তওবা কবুলের আশা : মৃত্যুর পূর্বে কেউ তওবা করলে তা কবুলের আশা করা যায়। পাপের সমপরিমাণ শাস্তি ভোগের পর আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে মুক্তি দিতে পারেন।
৪. ইসলাম থেকে খারিজ : একটিমাত্র অন্যায়ের কারণে কোনো মুসলমান ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যেতে পারে। সকল প্রকার পাপ পরিত্যাগের ওপরই প্রকৃত ঈমান বা বিশ্বাস নির্ভর করে ।
৫. সাম্প্রদায়িক মনোভাব : যেসব মুসলমান খারেজীদের মত সমর্থন করে না, তারা নাস্তিক এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কর্তব্য।
৬. বিবেকের পবিত্রতা : ঈমান ও কর্মের ন্যায় খারেজীরা বিবেকের পবিত্রতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাদের মতে, বিবেকের পবিত্রতা মানুষকে মহৎ কার্যে প্রেরণা দেয়।
৭. কুরআনের শাব্দিক অর্থ গ্রহণ : খারেজীদের আরজাকিয়া উপদল কুরআনের পারিভাষিক অর্থ গ্রহণ না করে শাব্দিক অর্থ গ্রহণ এবং ইজতেহাদের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে।
৮. অমুসলিমদের প্রতি উদারনীতি গ্রহণ : খারেজীরা অমুসলিমদের প্রতি উদারনীতি গ্রহণ করে। তাদের মতে যদি কোনো অমুসলিম হযরত মুহাম্মদ (স)-কে আল্লাহর নবী বলে স্বীকার করে, তবে তাকে মুসলমানদের সমান অধিকার দেয়া যাবে।
৯. অনারব মুসলিম ও যিম্মীদের প্রতি উদারনীতি : খারেজীরাঁ মাওয়ালী তথা অনারব মুসলমান ও যিম্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। তাদের অন্যান্য মুসলমানদের সমপর্যায়ে উন্নীত করার জন্য তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে।
১০. ধর্মের অনুশাসন : তারা যদিও বিশটি দল ও উপদলে বিভক্ত ছিল, তথাপি তারা ধর্মকে কোনো প্রকার বিতর্কমূলক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত না করতে বদ্ধপরিকর ছিল।
১১. ইসলাম ও ঈমান : খারেজীদের মতে, ইসলাম ও ঈমান এক এবং অবিভাজ্য । আর খাঁটি ব্যক্তিই ইসলামের অন্তর্ভুক্ত।
১২. পার্থিব বিলাসিতা : খারেজী সম্প্রদায়ের মতে, মুসলমানদের জন্য পার্থিব বিলাসিতা হারাম।
১৩. মৃত শিশুদের পরকাল : মৃত শিশুদের ব্যাপারে খারেজীদের আকিদা হচ্ছে বিধর্মীদের মৃত শিশুরা দোযখে আর মুসলমানদের মৃত শিশুরা বেহেশতে যাবে।
১৪. সূরা ইউসুফ পরিত্যাগ : সূরা ইউসুফে প্রেমকাহিনী স্থান লাভ করায় তারা এ সূরা পরিত্যাগ করে। তাদের দাবি হচ্ছে, সূরা ইউসুফ কুরআনের অন্তর্ভুক্ত হলে এ ধরনের প্রেমকাহিনী তাতে অন্তর্ভুক্ত হতো না।
১৫. কুরআন হাদীসের প্রতি আনুগত্য : খারেজীরা কুরআন হাদীসের অখণ্ডতায় বিশ্বাস করত। তারা একমাত্র কুরআন হাদীস অনুযায়ী জীবন পরিচালনায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল। এ থেকে ন্যূনতম বিচ্যুতিও তারা সহ্য করত না। এজন্য খারেজী সম্প্রদায় ইসলামে বিশুদ্ধবাদী বলে পরিচিত।
১৬. বিত্তবৈভব বর্জন : খারেজী সম্প্রদায় বিত্তবৈভব অর্জনে নিরুৎসাহিত করে।
খ. রাজনৈতিক মতবাদ :
১. গণতন্ত্রপন্থি : খলিফা নির্বাচনে খারেজীরা চরম গণতন্ত্রপন্থি। তাদের মতে, খলিফাকে সমগ্র মুসলিম সমাজ কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।
২. খলিফার যোগ্যতা : তাদের মতে, খলিফা হওয়ার জন্য কোনো গোত্র বা পরিবার নির্ধারিত নেই। মুসলিম সমাজের যে কোনো যোগ্য ব্যক্তিই খলিফা হতে পারেন। এমনকি নির্বাচিত খলিফা নারী অথবা ক্রীতদাস হলেও তাতে কিছু যায় আসে না।
৩. জনসমর্থিত ও আস্থাভাজন : খলিফা যতক্ষণ জনগণের আস্থাভাজন থাকবেন, ততক্ষণই তিনি খলিফা পদে বহাল থাকবেন। তিনি যদি জনগণের কোনো অকল্যাণ করেন অথবা ইসলামের মূলনীতির বিরোধিতা করেন, তাহলে তাঁকে পদচ্যুত করতে হবে, এমনকি হত্যাও করা যেতে পারে।
৪. খলিফা নিষ্প্রয়োজন : একদল চরমপন্থি খারেজীর মতে, মুসলমানদের কোনো খলিফা বা ইমাম নির্বাচন করার প্রয়োজন নেই। আল্লাহর কুরআন ও নবীর সুন্নাতই মুসলমানদের জন্য যথেষ্ট।
৫. প্রথম দু’খলিফার স্বীকৃতি : চার খলিফার মধ্যে খারেজীরা মাত্র হযরত আবু বকর ও ওমর (রা)-কে খলিফা বলে স্বীকার করে। তাদের মতে, হযরত ওসমান ও আলী (রা)-এর খেলাফত স্বীকার করা যায় না। কারণ তাঁরা সর্বসাধারণ মুসলমানের আস্থাভাজন ছিলেন না।
৬.জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারী : খারেজীরা উমাইয়া ও আব্বাসীয়দের জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারী, ইসলামের গণতান্ত্রিক আদল ধ্বংসকারী বলে মনে করত। ঐতিহাসিক খোদা বখশ বলেন, খারেজীরা ছিল ধর্মে গোঁড়া এবং রাজনীতিতে গণতন্ত্রপন্থি।
৭. অনারবদের আরবজাতির ওপর প্রাধান্য দান : তারা আরব আভিজাত্য খর্ব করার উদ্দেশ্যে অনারবদের আরবদের ওপর স্থান দিত। কেননা তারা আরবজাতিকে হিংসার চোখে দেখত।
৮. অযোগ্য খলিফাকে অপসারণ : কোনো খলিফা যদি পুরোপুরিভাবে জনগণের উন্নতি সাধন করতে না পারেন, তবে অযোগ্য খলিফাকে অপসারণ করে যোগ্য ব্যক্তিকে খলিফা পদে নির্বাচিত করতে হবে।
৯. আইনের বিধান : অর্থাৎ, আল্লাহর হুকুম ছাড়া আর কারো হুকুম নেই— এটা খারেজীদের অন্যতম রাজনৈতিক মতবাদ।
১০. অপসারণ নীতি : খলিফা যতদিন জনগণের আস্থাভাজন থাকবেন, ততদিনই তিনি ক্ষমতায় থাকবেন। জনস্বার্থবিরোধী বা ইসলামপরিপন্থি কোনো কাজ করলে তাঁকে অপসারিত করে যোগ্যতর ব্যক্তিকে খলিফা পদে বসাতে হবে।
১১. রাজতন্ত্রবিরোধী : খারেজী সম্প্রদায় চরম রাজতন্ত্রবিরোধী। তাই তারা উমাইয়া শাসক কর্তৃক বার বার নির্যাতিত হয় এবং আব্বাসীয়দের সাথে মিলে উমাইয়াদের পতন ঘটায়।
আরো পড়ুন :
খারেজী সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর ইতিহাস
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা
أهل السنة والجماعة -এর পরিচিতি
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বৈশিষ্ট্য
কাদিয়ানীদের আকিদার মূলনীতিসমূহ
ট্যাগ সমূহ : খারেজীদের ধর্মীয় মতবাদ কি,খারেজী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মতবাদ,খারেজীদের রাজনৈতিক মতবাদ,খারেজী সম্প্রদায়ের ইতিহাস,খারেজীদের লক্ষণ,খারেজী কারা ব্যাখ্যা কর,খারেজীদের আকিদা,খারেজীদের মতবাদ,খারেজীদের ধর্মীয় মতবাদ কি,খারেজী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মতবাদ,খারেজীদের রাজনৈতিক মতবাদ,খারেজী সম্প্রদায়ের ইতিহাস,খারেজীদের লক্ষণ,খারেজী কারা ব্যাখ্যা কর,খারেজীদের আকিদা,খারেজীদের মতবাদ,খারেজীদের ধর্মীয় মতবাদ কি,খারেজী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মতবাদ,খারেজীদের রাজনৈতিক মতবাদ,খারেজী সম্প্রদায়ের ইতিহাস,খারেজীদের লক্ষণ,খারেজী কারা ব্যাখ্যা কর,খারেজীদের আকিদা,খারেজীদের মতবাদ,খারেজীদের ধর্মীয় মতবাদ,খারেজীদের ধর্মীয় মতবাদ,খারেজীদের ধর্মীয় মতবাদ |