কুরবানীর ফজিলত ও তাৎপর্য
কুরবানীর ফজিলত :
মুসলমানের জন্য কুরবানি করা মহান আল্লাহর নির্দেশ। কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনাও তাই। আল্লাহ তাআলা বলেন-فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ অর্থ : ‘অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ পড় এবং কুরবানি কর।’ (সুরা কাউসার আয়াত নং ২)
আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতে নামাজ ও কুরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সবচেয়ে বেশি এ দুইটি ইবাদত করেছেন। তিনি যেমন অধিক নামাজ আদায় করেছেন তেমনি বেশি কুরবানিও করেছেন। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কুরবানি প্রসঙ্গে একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। নবী (স.) কুরবানীর ফযীলত ও অসংখ্য সওয়াবের উল্লেখ করে বলেন—
১. সাহাবায়ে কেরাম (রা) নবী (স)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এ কুরবানী কি বস্তু ? নবী বলেন, এ তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আ)-এর সুন্নাত। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এতে আমাদের জন্যে কি সওয়াব রয়েছে ? নবী বলেন, তার প্রত্যেক পশমের জন্যে এক একটি সওয়াব পাওয়া যাবে।-(তিরমিযি, ইবনে মাজাহ)
২. ‘নাহারের দিন’ অর্থাৎ যুলহাজ্জ মাসের ১০ তারিখ কুরবানীর রক্ত প্রবাহিত করা থেকে ভালো কাজ আল্লাহর কাছে আর কিছু নেই। কিয়ামতের দিন কুরবানীর পশু তার শিং, পশম ও খুর সহ হাজির হবে। কুরবানীর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা কবুল হয়ে যায়। অতএব, মনের আগ্রহ সহ এবং সন্তুষ্ট চিত্তে কুরবানী কর।-(তিরমিযি, ইবনে মাজাহ)
৩. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন যে, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফাতেমা যোহরা (রা.)-কে বলেন, ফাতেমা ! এসো, তোমার কুরবানীর পশুর কাছে দাঁড়িয়ে থাক । এজন্যে যে, তার যে রক্ত কণা মাটিতে পড়বে তার বদলায় আল্লাহ তোমার পূর্বের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। হযরত ফাতেমা (রা) বলেন, এ সুসংবাদ কি আহলে বায়েতের জন্য নির্দিষ্ট, না সকল উম্মতের জন্যে ? নবী (স) বলেন, আমাদের আহলে বায়েতের জন্যেও এবং সকল উম্মতের জন্যেও !-(জামউল ফাওয়ায়েদ)
৪. সামর্থ্যবানদের মধ্যে যারা কুরবানি করে না, তাদের প্রতি তিনি এভাবে হুশিয়ারী করেছেন। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানি করে না, সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের ধারে-কাছেও না আসে।’ (মুসনাদে আহামদ, ইবনে মাজাহ, মুসতাদরেকে হাকেম)
৫. হযরত ইবনে বারীদাহ (রা) তাঁর পিতার বরাত দিয়ে বলেন, নবী (স) ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খেয়ে নামাযে যেতেন না। আর ঈদুর আযহার দিন ঈদুল আযহার নামাযের আগে কিছু খেতেন না। -(তিরমিযি, আহমাদ) তারপর নামায থেকে ফিরে এসে কুরবানীর কলিজী খেতেন।
৬. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো বছর কুরবানি থেকে বিতর থাকেননি। তিনি কর্মে দ্বারা যেমন কুরবানি করতে অনুপ্রাণিত করেছেন আবার বক্তব্য দিয়ে কুরবানির প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। যেমন, হাদিসে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি (ঈদের) নামাজের আগে (পশু) জবেহ করে অর্থাৎ কুরবানি করে তাহলে সে যেন নিজের জন্য জবেহ করে। আর যে নামাজের পরে জবেহ করে (কুরবানি করে) তার কুরবানি সিদ্ধ হয় এবং সে মুসলমানদের তরিকার অনুসারী হয়।’ (বুখারি)
মনে রাখতে হবে
কুরবানি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে অর্থ খরচ করে স্বার্থ ত্যাগ করে এ ইবাদত করতে হয়। এতে যেমন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নাত জাগ্রত হয়। আবার ইসলামের নির্দশনও প্রকাশ পায়। কুরবানির মাধ্যমে পরিবার ও দরিদ্রজনের উপর খরচ করা হয় এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জন্য হাদিয়া ও উপঢৌকন পেশ করার সুযোগ হয়। কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য করতে পেরেই মুমিন মুসলমান আনন্দলাভ করতে পারে। আর সেই খুশিই হলো কুরবানির খুশি।
এমনটি যেন না হয়
হজ্জ্ব না করে হজ্জ্বের টাকা সাদকাহ করলে যেমন ফরয আদায় হয় না। তেমনি কুরবানি না করে কুরবানির টাকা গরিব-দুঃখীর মাঝে বণ্টন করলেও কুরবানির হক আদায় হবে না। কেননা কুরবানিতে আল্লাহর জন্য পশু জবেহ করা হলো ইবাদত ও দ্বীন ইসলামের নির্দশন এবং প্রতীক। এ কারণেই ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন-
‘কুরবানি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ এবং সমগ্র মুসলিম জাতির এক আমল। আর কোথাও কথিত নেই যে, তাঁদের কেউ কুরবানির পরিবর্তে তার মূল্য সাদকাহ করেছেন। আবার যদি তা উত্তম হতো তবে তাঁরা নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম করতেন না।’ (ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া)
আরো পড়ুন :
ট্যাগ সমূহ : কুরবানীর ফজিলত,কুরবানীর গুরুত্ব ও ফজিলত,কুরবানীর তাৎপর্য,কুরবানীর ফযিলত,কুরবানীর ফজিলত সম্পর্কে হাদিস,কুরবানীর ফজিলত ও তাৎপর্য,কুরবানীর ফজিলত,কুরবানীর গুরুত্ব ও ফজিলত,কুরবানীর তাৎপর্য,কুরবানীর ফযিলত,কুরবানীর ফজিলত সম্পর্কে হাদিস,কুরবানীর ফজিলত ও তাৎপর্য |