কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনী

কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনী

কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনী

কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনী

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের একজন মাস্টার, যিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে খ্যাত। তিনি কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, ভাষণ, সঙ্গীত সহ সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় অসামান্য প্রতিভা দেখিয়েছেন। বিদ্রোহী কবি হিসেবে খ্যাত কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র। বিংশ শতাব্দীর এই মহান লেখক কেবল একজন কবিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক, দেশপ্রেমিক এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি।

তার জন্ম ও শৈশব:

  • কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির চুরুলিয়া গ্রামে (বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া ব্লকের চুরুলিয়া গ্রাম) জন্মগ্রহণ করেন।
  • ছোটবেলা থেকেই তিনি ‘দুখু মিয়া’ নামে পরিচিত ছিলেন।
  • ৯ বছর বয়সে পিতৃহারা হলে অভাব অনটনের কারণে শিক্ষাগ্রহণে বাধা সৃষ্টি হয়।
  • স্থানীয় মক্তবে কুরআন, ইসলাম ধর্ম, দর্শন, ইসলামী ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন করেন।
  • মক্তবে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উক্ত মোক্তবেই শিক্ষকতার কাজ শুরু করেন।

কর্মজীবন:

  • মাত্র ১০ বছর বয়সে পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে কর্মজীবন শুরু করতে বাধ্য হন।
  • মক্তবে শিক্ষকতার পাশাপাশি হাজী পালোয়ানের কবরের সেবক ও মসজিদের মুয়ানযিন হিসেবে কাজ শুরু করেন।
  • বাল্যকালে স্থানীয় লোকসঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে লেটো (ভাম্রমান নাট্য দল) দলে যোগদান করেন।
  • প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।
  • সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন।
  • ১৯২২ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করে কলকাতায় চলে আসেন।
  • ‘নাগরিক’, ‘কাঁটা’, ‘মোহম্মদী’, ‘গণশক্তি’ সহ বেশ কিছু পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।
  • ‘বিদ্রোহী’ কবিতা সংকলনের জন্য সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

সাহিত্যকর্ম:

  • কবিতা: বিদ্রোহী, কড়া নাগর, নজরুলগীতি, হুঁকার, চল্‌ চল্‌ চল্‌, কবিতা
  • উপন্যাস: মৃত্যুক্ষুধা, করুণা, বিদ্রোহী, কুহেলিকা
  • নাটক: বিষাদ, নবীন, কর, কালকলঙ্কিনী
  • প্রবন্ধ ও ভাষণ: নজরুল রচনা, বন্দী বিদ্রোহী, চিন্তাভাবনা

সঙ্গীত:

  • নজরুল সঙ্গীত নামে পরিচিত এক একক গান সঙ্গীতধারার প্রবর্তক।
  • ‘চল্‌ চল্‌ চল্‌’, ‘ধরো না মাইয়া মন’, ‘নবীন নবীন এ বসন্ত’, ‘কারা কারা ও ভাই’ সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান রচনা ও সুর করেছেন।

উপাধি ও সম্মাননা:

  • জাতীয় কবি।
  • নজরুলকে “বিদ্রোহী কবি”, “কবিরাজ”, “নজরুল” ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
  • তিনি ১৯৬০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা “পদ্মভূষণ” লাভ করেন।
  • তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
  • ১৯৭৬ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি

কাজী নজরুল ইসলামের অনেক উক্তি রয়েছে, যা আমাদের জীবনকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। যেমন-

তার কিছু বিখ্যাত উক্তি হল:

  • “সত্যকে বলো, সত্যকে চাও, সত্যকে জয় করো।”
  • “আমি যে দিন মরব, সেই দিন পৃথিবীতে বিদ্রোহের শঙ্খ বাজবে।”
  • “মানুষের জন্য মানুষ, মানুষের বাইরে নাই কেউ।”
  • “ধর্ম যদি হয় মানুষকে মানুষ করে তোলে, তবেই সে ধর্ম।”
  • “কোনো কাজ ছোট বড় হয় না, কর্মের মহিমা কর্মেই নিহিত।”
  • “সাহসী হও, সত্যবাদী হও, মর্যাদাবান হও।”
  • “জীবন যুদ্ধ, তুমি সংগ্রামী, তুমি সৈনিক।”
  • “বিদ্রোহী আমার নাম, বিদ্রোহী আমার ধর্ম।”
  • “ভয় পেয়ে নয়, ভালোবেসে মানুষকে মানুষ করতে হবে।”
  • “স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার।”

মানবতা ও সমাজ:

  • “মানুষের জীবন একটি যুদ্ধক্ষেত্র, এখানে লড়াই করতে হবে প্রতি পদক্ষেপে।”
  • “সত্য হারায় না কখনো, মিথ্যা ক্ষণস্থায়ী।”
  • “ধর্ম যদি মানুষকে মানুষ করে না, তবে ধর্ম বৃথা।”
  • “জাতিভেদ ভেদাভেদ ভেঙে ফেলো, সকল মানুষ একই।”
  • “বিদ্রোহী আমার নাম, বিদ্রোহী আমার জাতি।”

সাহস ও আত্মবিশ্বাস:

  • “ভয় পেয়ে কেউ যদি জীবনযাপন করে, তবে সে জীবন নয়, জীবন্ত মৃত্যু।”
  • “আমি যেদিন মরব, সেদিনই আমার জন্ম হবে।”
  • “মানুষের মনে যদি বিশ্বাস থাকে, তবে সে সকল বাধা অতিক্রম করতে পারে।”
  • “নিজেকে ছোট করে দেখো না, তোমার মধ্যে অসীম সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে।”
  • “লড়াই করো, হেরে যাওয়াটা লজ্জার নয়, লড়াই না করাই লজ্জার।”

প্রেম ও সৌন্দর্য:

  • “প্রেম মানে কেবল প্রণয় নয়, প্রেম মানে ত্যাগ, সহনশীলতা ও আত্মদান।”
  • “সৌন্দর্য কেবল মুখের নয়, সৌন্দর্য মনেরও।”
  • “কবিতা হল সৌন্দর্যের প্রকাশ, সৌন্দর্য হল জীবনের প্রাণ।”
  • “সঙ্গীত আমার আত্মার খাদ্য, সঙ্গীত ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ।”
  • “প্রকৃতি আমার অনুপ্রেরণার উৎস, প্রকৃতির সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে।”

কাজী নজরুল ইসলামের ধর্ম বিষয়ক কিছু বিখ্যাত উক্তি:

ধর্মের সার্বজনীনতা:

  • “আমার ধর্ম মানব-ধর্ম, আমার মন্দির মানব-মন।”
  • “ধর্ম যদি মানুষকে মানুষ করে না, তবে ধর্ম বৃথা।”
  • “সকল ধর্মের সার মূলত একই, ভিন্ন কেবল নাম ও রীতিনীতি।”
  • “ধর্মের ভেদাভেদ ভেঙে ফেলো, সকল মানুষ একই ঈশ্বরের সন্তান।”

ধর্মীয় বিশ্বাস ও মানবিক মূল্যবোধ:

  • “ঈশ্বরকে ভালোবাসো মানে মানুষকে ভালোবাসা।”
  • “ধর্ম মানে কেবল পূজা-অর্চনা নয়, ধর্ম মানে ন্যায়বিচার ও সত্যবাদিতা।”
  • “ধর্ম যদি মানুষকে লড়াইয়ে উৎসাহিত করে, তবে সে ধর্ম নয়, অধর্ম।”
  • “সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্য স্থাপন করা আমাদের কর্তব্য।”

ধর্মীয় রীতিনীতি ও কুসংস্কার:

  • “ধর্মের নামে যারা অত্যাচার করে, তারা ধর্মের শত্রু।”
  • “ধর্মের নামে কুসংস্কার ছড়িয়ে মানুষকে অন্ধকারে রাখা ঠিক নয়।”
  • “ধর্মীয় রীতিনীতির চেয়ে মানবিক মূল্যবোধকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”
  • “ধর্মের নামে যারা বিভেদ সৃষ্টি করে, তারা মানবতার শত্রু।”

কাজী নজরুল ইসলাম একজন ধর্মনিরপেক্ষ কবি ছিলেন। তিনি সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, তবে কোন নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ধর্মের চেয়ে মানবিক মূল্যবোধই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও আরও অসংখ্য উক্তি রয়েছে যা তার বিদ্রোহী চেতনা, মানবতাবাদী দর্শন এবং জীবন প্রেমের প্রতিফলন ঘটায়।

কাজী নজরুল ইসলামের ছদ্মনাম কি

কাজী নজরুল ইসলামের সবচেয়ে বিখ্যাত ছদ্মনাম ছিল “ধূমকেতু”। তিনি আরও কিছু ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন, যার মধ্যে রয়েছে:

  • “বিদ্রোহী”
  • “নজরুল”
  • “নবীন”
  • “কৃষ্ণকান্ত”
  • “শেখ ফয়জুল্লাহ”
  • “কায়সার”
  • “বুলবুলি”

নজরুল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। “ধূমকেতু” ছদ্মনামটি তিনি ১৯১৯ সালে ব্যবহার শুরু করেন এবং এটি তার সবচেয়ে জনপ্রিয় ছদ্মনামে পরিণত হয়। তিনি বিভিন্ন কারণে ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। কখনও কখনও তিনি সামাজিক বা রাজনৈতিক বিষয়ে মতামত প্রকাশ করার জন্য ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন যা তাঁর প্রকৃত নামের সাথে যুক্ত করা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অন্য সময় তিনি নতুন ধারণা বা সাহিত্যিক শৈলীর সাথে পরীক্ষা করার জন্য ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।

কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতা

কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ। তার লেখা আজও পাঠকদের অনুপ্রাণিত এবং উত্থাহিত করে। তার কিছু বিখ্যাত কবিতা নিচে দেওয়া হলো-

গ্রন্থপ্রকাশকাল (বঙ্গাব্দ)প্রকাশকাল (খ্রিস্টাব্দ)বিষয়বস্তু
অগ্নিবীণাকার্তিক ১৩২৯ বঙ্গাব্দ২৫শে অক্টোবর ১৯২২ খ্রিস্টাব্দএই গ্রন্থে মোট বারোটি কবিতা আছে। কবিতাগুলি হচ্ছে – ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘বিদ্রোহী’, ‘রক্তাম্বর-ধারিণী মা’, ‘আগমণী’, ‘ধূমকেতু’, কামাল পাশা’, ‘আনোয়ার ‘রণভেরী’, ‘শাত-ইল-আরব’, খেয়াপারের তরণী’, কোরবানী’ ও মোহররম’। এছাড়া গ্রন্থটির সর্বাগ্রে বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ-কে উৎসর্গ করে লেখা একটি উৎসর্গ কবিতাও আছে।
সাম্যবাদীপৌষ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ২০শে ডিসেম্বর ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দবইটিতে মোট ১১ টি কবিতা রয়েছে । সবগুলোতেই মানুষের সমতা নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে ।
ঝিঙে ফুলচৈত্র ১৩৩২ বঙ্গাব্দ১৪ই এপ্রিল ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দছোটদের কবিতা
সিন্ধু হিন্দোল১৩৩৪ বঙ্গাব্দ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দএই কাব্যগ্রন্থে মোট ১৯টি কবিতা রয়েছে।
চক্রবাকভাদ্র ১৩৩৬ বঙ্গাব্দ,১২ই আগস্ট ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দএই কাব্যে নজরুল বেদনার ছবি তুুুলে ধরেছেন; এতে রয়েছে প্রেমের অনুুুভূতি এবং অতীত সুুখের স্মৃতিচারণা।
নতুন চাঁদচৈত্র ১৩৫১ বঙ্গাব্দমার্চ ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ।এতে রয়েছে নজরুলের ১৯টি কবিতা।
মরুভাস্কর১৩৫৭ বঙ্গাব্দ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দহজরত মোহাম্মদ সঃ এর জীবনী নিয়ে চারটি সর্গে ১৮ টি খণ্ড-কবিতা নিয়ে এই কাব্যগ্রন্থ।
নজরুল ইসলাম: ইসলামী কবিতা১৯৮২ খ্রিস্টাব্দনজরুল ইসলামের ইসলামী কবিতা সংকলন

কবিতা ও গান

গ্রন্থপ্রকাশকাল (বঙ্গাব্দ)প্রকাশকাল (খ্রিস্টাব্দ)বিষয়বস্তু
দোলন-চাঁপাআশ্বিন ১৩৩০ বঙ্গাব্দঅক্টোবর ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দপ্রথম সংস্করণ এই কাব্যগ্রন্থে ১৯টি কবিতা ছিল। সূচিপত্রের আগে মুখবন্ধরূপে সংযোজিত কবিতা “আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে” ১৩৩০ বঙ্গাব্দের (১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ) জ্যৈষ্ঠ মাসের কল্লোল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দোলনচাঁপা কাব্যগ্রন্থের পরবর্তী সংস্করণে ৫০ টি কবিতা সংকলিত হয়।
বিষের বাঁশিশ্রাবণ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ১০ই আগস্ট ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দএই গ্রন্থে ২৭ টি কবিতা রয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামের বাজেয়াপ্ত ৫টি গ্রন্থের মধ্যে এটি অন্যতম।
ভাঙ্গার গানশ্রাবণ ১৩৩১ বঙ্গাব্দআগস্ট ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দবিদ্রোহাত্মক কাব্যগ্রন্থ। ১১ নভেম্বর ১৯২৪ তারিখে তৎকালীন বঙ্গীয় সরকার গ্রন্থটি বাজেয়াফত করে ও নিষিদ্ধ করে। ব্রিটিশ সরকার কখনো এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেননি।
চিত্তনামাশ্রাবণ ১৩৩২ বঙ্গাব্দআগস্ট ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ
ছায়ানটআশ্বিন ১৩৩২ বঙ্গাব্দ২১শে সেপ্টেম্বর ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দএতে রয়েছে নজরুলের ৫০টি কবিতা।
পুবের হাওয়ামাঘ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ৩০শে জানুয়ারি ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দএই গ্রন্থে ২০ টি কবিতা রয়েছে।
সর্বহারাআশ্বিন ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ২৫শে অক্টোবর ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দসর্বহারা কাব্যগ্রন্থে ১০ টি কবিতা রয়েছে
ফণী-মনসাশ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ২৯শে জুলাই ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দজিঞ্জীর কাব্যগ্রন্থে ১৬টি কবিতা রয়েছে
সঞ্চিতাআশ্বিন ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ,১৪ই অক্টোবর ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দআটাত্তরটি কবিতা ও সতেরোটি গান মিলে একটি কাব্য-সংকলন।
জিঞ্জীরকার্তিক ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ, ।১৫ই নভেম্বর ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ
সন্ধ্যাভাদ্র ১৩৩৬ বঙ্গাব্দ১২ই আগস্ট ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ২৪টি কবিতা আর গান নিয়েই এই গ্রন্থ। বাংলাদেশের রণসংগীত “চল চল চল, উর্ধ গগণে বাঝে মাদল” এই বই থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রলয় শিখাঅগ্রহায়ণ ১৩৩৭ বঙ্গাব্দআগস্ট ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ
নির্ঝরমাঘ ১৩৪৫ বঙ্গাব্দ২৩শে জানুয়ারি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দএই গ্রন্থে মোট কবিতার সংখ্যা ২৫টি। নজরুল ইসলামের নির্ঝর বইকে অনেক সমালোচকের কাছে একটি ভাগ্যবিড়ম্বিত বই বলে মনে হয়েছে।
সঞ্চয়ন১৩৬২ বঙ্গাব্দ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ
শেষ সওগাতবৈশাখ ১৩৬৫ বঙ্গাব্দ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দ
ঝড়মাঘ ১৩৬৭ বঙ্গাব্দজানুয়ারি ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দএতে রয়েছে নজরুলের ২৪টি কবিতা।

কাজী নজরুল ইসলামের শেষ কবিতা

কাজী নজরুল ইসলামের শেষ রচিত কবিতা নির্ধারণ করা কঠিন, কারণ তিনি তার জীবনের শেষের দিকে অনেক কবিতা লিখেছিলেন।

তবে, তার কিছু বিখ্যাত শেষ কবিতা হল:

  • “বিদায়” (১৯৬২): এই কবিতায়, নজরুল মৃত্যুর সাথে তার সম্মুখীনতা এবং পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার বিষয়ে লিখেছেন।
  • “শেষের গান” (১৯৬৩): এই কবিতায়, নজরুল জীবনের অর্থ এবং মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করেছেন।
  • “মৃত্যুসাধু” (১৯৬৪): এই কবিতায়, নজরুল মৃত্যুকে একজন সাধুর সাথে তুলনা করেছেন যিনি আত্মার মুক্তির পথ দেখান।
  • “চিরন্তন” (১৯৬৬): এই কবিতায়, নজরুল প্রেমের চিরন্তনতার কথা বলেছেন।

এই কবিতাগুলি ছাড়াও, নজরুল তার জীবনের শেষের দিকে আরও অনেক কবিতা লিখেছিলেন যা বিভিন্ন সাময়িকপত্রে এবং সংকলনে প্রকাশিত হয়েছিল।

কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি উপাধি দেন কে

 ১৯২২ সালের ২২ অক্টোবর, ধূমকেতু পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত “বিদ্রোহী” কবিতাটি প্রকাশের পর প্রমথ চৌধুরী কাজী নজরুল ইসলামকে এই উপাধি দেন। কাজী নজরুল ইসলামকে “বিদ্রোহী কবি” উপাধি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রমথ চৌধুরীর ভূমিকা:

প্রমথ চৌধুরী, বিখ্যাত বাঙালি লেখক, সমালোচক এবং অনুবাদক, কাজী নজরুল ইসলামকে “বিদ্রোহী কবি” উপাধি দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

১৯২৯ সালে, চৌধুরী “সাহিত্য” পত্রিকায় “বিদ্রোহী কবি” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন যেখানে তিনি নজরুলের সাহিত্যকর্মের বিদ্রোহী চেতনা, সাহসী রচনা এবং সমাজের প্রতিবাদী মনোভাবের বিশ্লেষণ করেছিলেন।

চৌধুরী লিখেছিলেন যে নজরুলের কবিতা ও গান “সমাজের জীর্ণ-ঝীর্ণ নীতি-নৈতিকতা ও অন্ধকারাচ্ছন্ন রীতিনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চিৎকার”। তিনি আরও যুক্তি দিয়েছিলেন যে নজরুল “নিপীড়িত মানবতার মুক্তির বাণীঘোষ” এবং “সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতার প্রতীক”।

চৌধুরীর এই প্রবন্ধটি বাংলা সাহিত্যিক সম্প্রদায়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং নজরুলকে “বিদ্রোহী কবি” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছিল।

চৌধুরীর লেখার বাইরেও, তিনি নজরুলের সাহিত্যকর্মের প্রচারে এবং জনপ্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি নজরুলের কবিতা ও গানের পাঠকালোচনা, সমালোচনা এবং অনুবাদ করেছিলেন।

পরিশেষে, বলা যায় যে, প্রমথ চৌধুরী কাজী নজরুল ইসলামকে “বিদ্রোহী কবি” উপাধি দানে এবং বাংলা সাহিত্যে তার অবস্থান প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

কাজী নজরুল ইসলাম কয়টি বিয়ে করেন

কাজী নজরুল ইসলাম কয়টি বিয়ে করেন: কাজী নজরুল ইসলাম মোট দুইবার বিয়ে করেছিলেন।

প্রথম বিয়ে:

  • ১৯২১ সালের ১৭ জুন, তিনি নার্গিস নামে একজন মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেন। নার্গিস ছিলেন খুলনার আলী আকবর খানের মেয়ে।
  • কিন্তু এই বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯২২ সালে, নজরুল ও নার্গিসের ডিভোর্স হয়ে যায়।

দ্বিতীয় বিয়ে:

  • ১৯২৯ সালের ৮ অক্টোবর, নজরুল কুমিল্লার ব্রাহ্মণ পরিবারের প্রমীলা দেবী (আশালতা সেনগুপ্ত নামেও পরিচিত) কে বিয়ে করেন। প্রমীলা ছিলেন বীরেন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের মেয়ে।
  • নজরুল ও প্রমীলা সুখী দাম্পত্য জীবনযাপন করেন এবং তাদের চার সন্তান ছিল।

কাজী নজরুল ইসলাম একজন মহান কবি ও লেখক ছিলেন এবং তার ব্যক্তিগত জীবন তার সাহিত্যকর্মের মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুর তারিখ

কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুর তারিখ হলো-

  • তারিখ: ২৯ আগস্ট, ১৯৭৬ (ইংরেজি) / ১২ ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ।
  • স্থান: ঢাকা, বাংলাদেশ।
  • বয়স: ৭৭ বছর।
  • মৃত্যুর কারণ: বার্ধক্যজনিত জটিলতা।

মৃত্যুর বিবরণ:

  • ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় নজরুলের স্বাস্থ্য ক্রমশ খারাপ হতে থাকে।
  • ১৯৭২ সালে তিনি ঢাকার ধানমন্ডিতে থাকা তার বাসভবনে চলে আসেন।
  • ১৯৭৪ সালে তিনি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হন এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান।
  • ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট, বৃহস্পতিবার ভোর ৪ টার দিকে ঢাকার ধানমন্ডির বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মৃত্যুর পর:

  • নজরুলের মৃত্যুতে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় শোক ঘোষণা করে।
  • ঢাকার জাতীয় সমাধিতে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
  • তার মৃত্যুকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কাজী নজরুল ইসলামের স্মরণ:

  • নজরুল জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিত এবং বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত “চলো ভাই” রচনার জন্য বিশেষভাবে সমাদৃত।
  • তার সাহিত্যকর্ম, বিশেষ করে কবিতা ও গান, আজও অত্যন্ত জনপ্রিয়।
  • তার জন্মদিন ও মৃত্যুবার্ষিকী বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়।
  • ঢাকায় তার নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি স্টেডিয়াম রয়েছে।

আরো পড়ুন: হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর জীবনী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top