ঔষধ কি ও কিভাবে কাজ করে

ঔষধ কি, ঔষধ কি দিয়ে তৈরি হয়,ঔষধ কি কাজ করে,ঔষধ কিভাবে কাজ করে,

ঔষধ কি

ঔষধ হলো এমন রাসায়নিক পদার্থ যা প্রয়োগে প্রাণিদেহের স্বাভাবিক ক্রিয়া প্রভাবিত করে এবং যার মাধ্যমে রোগ নিরাময় হয়, প্রতিরোধ করা যায়, অথবা যন্ত্রণা ও অসুস্থতা দূর করা যায়।

ঔষধের শ্রেণিবিভাগ:

  • থেরাপিউটিক (রোগনিরাময়কারী) ঔষধ: এই ধরণের ঔষধ রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন: অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ঔষধ, ক্যান্সারের ঔষধ ইত্যাদি।
  • প্রোফাইলেকটিক (প্রতিরোধক) ঔষধ: এই ধরণের ঔষধ রোগ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন: টিকা, টেটেনাস শট, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক ঔষধ ইত্যাদি।

ঔষধের ব্যবহার:

ঔষধ বিভিন্ন রুপে ব্যবহার করা হয়, যেমন:

  • মৌখিক: ঔষধ মুখ দিয়ে খাওয়া হয়।
  • ইনজেকশন: ঔষধ শিরায়, পেশীতে, বা ত্বকের নিচে ইনজেকশন করা হয়।
  • টপিক্যাল: ঔষধ ত্বকে, চোখে, বা কানে প্রয়োগ করা হয়।
  • ইনহেলেশন: ঔষধ শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়।

ঔষধের ঝুঁকি:

যেকোন ঔষধেরই কিছু ঝুঁকি থাকে। ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যা হালকা থেকে তীব্র হতে পারে। কিছু ঔষধ অন্য ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। ঔষধ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

বাংলাদেশে ঔষধ নিয়ন্ত্রণ:

বাংলাদেশে ঔষধ নিয়ন্ত্রণের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (Drug Administration Directorate – DAD) নামে একটি সরকারি সংস্থা রয়েছে। DAD ঔষধের উৎপাদন, বিতরণ, বিক্রয়, এবং ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে।

আরো পড়ুন : জ্বর সর্দি কাশির ঔষধের নাম

ঔষধ কি দিয়ে তৈরি হয়

ঔষধ বিভিন্ন ধরণের উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। মূলত দুই ধরণের উপাদান ব্যবহার করা হয়:

১) সক্রিয় উপাদান:

  • এটি ঔষধের মূল কাজ করে।
  • এটি রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে, লক্ষণগুলি উপশম করে, অথবা শরীরের কোনও নির্দিষ্ট ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।
  • উদাহরণস্বরূপ, অ্যান্টিবায়োটিকের সক্রিয় উপাদান ব্যাকটেরিয়া হত্যা করে, অ্যাসপিরিনের সক্রিয় উপাদান ব্যথা ও প্রদাহ কমায়, এবং ইনসুলিনের সক্রিয় উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

২) নিষ্ক্রিয় উপাদান (Excipient):

  • এটি ঔষধের সক্রিয় উপাদানকে বহন করে, সুস্বাদু করে তোলে, এবং ঔষধের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে।
  • নিষ্ক্রিয় উপাদান বিভিন্ন ধরণের হতে পারে, যেমন:
    • বাইন্ডার: ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল তৈরির জন্য সক্রিয় উপাদানকে একসাথে ধরে রাখে।
    • ফিলার: ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলকে আরও বড় এবং পূর্ণ করতে ব্যবহৃত হয়।
    • ডিজিন্টেগ্রেন্ট: ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল শরীরে প্রবেশের পর দ্রুত বিভেদ করতে সাহায্য করে।
    • লুব্রিকেন্ট: ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল গিলে ফেলা সহজ করে।
    • প্রিজারভেটিভ: ঔষধকে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক থেকে রক্ষা করে।
    • রঙক: ঔষধকে আকর্ষণীয় করে তোলে এবং বিভিন্ন ঔষধকে একে অপরের থেকে আলাদা করে।
    • মিষ্টি: ঔষধের স্বাদ উন্নত করে।

কিছু নির্দিষ্ট উদাহরণ:

  • অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট: সক্রিয় উপাদান হল অ্যাসিটিলস্যালিসিলিক অ্যাসিড (ASA)। নিষ্ক্রিয় উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে সেলুলোজ, স্টার্চ, ম্যাগনেসিয়াম স্টিয়ারেট, এবং টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড।
  • প্যারাসিটামল সিরাপ: সক্রিয় উপাদান হল প্যারাসিটামল। নিষ্ক্রিয় উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে জল, সুক্রোজ, সোডিয়াম বেনজোয়েট, এবং ফ্লেভারিং।
  • ইনহেলার: সক্রিয় উপাদান হল একটি শ্বাস-ক্রিয়াশীল ঔষধ। নিষ্ক্রিয় উপাদান হল একটি প্রোপেল্যান্ট যা ঔষধটিকে ফুসফুসে সরবরাহ করে।

মনে রাখবেন:

এই তথ্য শুধুমাত্র তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে। ঔষধ কীভাবে তৈরি হয় সে সম্পর্কে আরও জানতে, একজন ফার্মাসিস্ট বা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

ঔষধ কি কাজ করে

ঔষধ বিভিন্নভাবে কাজ করে, তবে তার মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদের শরীরের কোষ ও অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে রোগ নিরাময়, প্রতিরোধ, বা যন্ত্রণা উপশম করা।

কিছু সাধারণ প্রক্রিয়া:

  • রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া: অনেক ঔষধ নির্দিষ্ট কোষের রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হয়ে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এর ফলে কোষের কার্যপ্রণালীতে পরিবর্তন আসে, যা রোগ নিরাময় বা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • জীবাণু ধ্বংস: অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণুকে ধ্বংস করে।
  • শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উদ্দীপিত করা: কিছু ঔষধ আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উদ্দীপিত করে যাতে এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
  • শরীরের প্রদাহ কমানো: অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ঔষধ শরীরের প্রদাহ কমিয়ে ব্যথা ও ফোলাভাব দূর করে।
  • হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা: কিছু ঔষধ হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে, যেমন ডায়াবেটিসের ঔষধ।
  • মস্তিষ্কের রাসায়নিক পরিবর্তন: কিছু ঔষধ মস্তিষ্কের রাসায়নিক পরিবর্তন করে, যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট।

ঔষধের কার্যকারিতা নির্ভর করে:

  • ঔষধের ধরণ
  • ঔষধের মাত্রা
  • ঔষধ সেবনের পদ্ধতি
  • রোগীর বয়স ও স্বাস্থ্যের অবস্থা
  • অন্যান্য ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়া

মনে রাখবেন:

  • ঔষধ শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।
  • নির্ধারিত মাত্রার বেশি ঔষধ সেবন করা যাবে না।
  • ঔষধের লেবেলে লেখা নির্দেশাবলী সাবধানে পড়ুন ও মেনে চলুন।
  • ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
  • ঔষধ অন্যদের সাথে ভাগ করে নেবেন না।
  • মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ ব্যবহার করবেন না।
ট্যাগ : ঔষধ কি, ঔষধ কি দিয়ে তৈরি হয়,ঔষধ কি কাজ করে,ঔষধ কিভাবে কাজ করে,ঔষধ কি, ঔষধ কি দিয়ে তৈরি হয়,ঔষধ কি কাজ করে,ঔষধ কিভাবে কাজ করে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top