ওহাবি কারা ও ওহাবি শব্দের অর্থ কি

ওহাবি,ওহাবি শব্দের অর্থ কি,ওহাবি কারা, ওহাবী কি, ওহাবী আন্দোলনের উদ্দেশ্য কি ছিল, ওহাবী আন্দোলনের নেতা কে ছিলেন, ওহাবী কথার অর্থ কি, ওহাবি কথার অর্থ কি, ওহাবি মানে কি, ওহাবি শব্দের অর্থ কী, ওহাবি শব্দের অর্থ কি,ওহাবিদের আকিদা,ওহাবি মানে কি,ওহাবি অর্থ কি,ওহাবি কারা,ওহাবি আন্দোলন,ওহাবি কারা ও ওহাবি শব্দের অর্থ কি,

ওহাবি কারা ও ওহাবি শব্দের অর্থ কি

আসলে ওহাব শব্দটি হবে ওহহাব যা আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক একটি নাম যার অর্থঃ যিনি সবকিছু দান করেন। যিনি সব কিছুর দাতা। এ হলো শাব্দিক বিশ্লেষণ।

‘ওহাবী’ হচ্ছে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব (র) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিতজানার পূর্বে এ একটি মুসলিম সম্প্রদায়ের নাম। ওহাবীদের আকিদা সম্পর্কে সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল ওহাব নজদী (র) এবং ‘ওহাবী আন্দোলন’ সম্পর্কে সংক্ষেপে জানা অত্যাবশ্যক। নিম্নে আবদুল ওহাব নজদী (র)-এর পরিচয় প্রদান করে ওহাবীদের আকিদা সম্পর্কে আলোচনা প্রদত্ত হলো।

আবদুল ওহাব নজদীরের পরিচয়ঃ

আবদুল ওহাব (র) ১৭০৭ মতান্তরে ১৭০৩ সালে আরবের নজদ প্রদেশের অন্তর্গত ওয়ায়না অঞ্চলের তামীম গোত্রের বনি সিনান শাখা বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বসরা, বাগদাদ ও কুর্দিস্তানে বহু বছর বসবাস করেন। নাদির শাহের শাসনামলে (১১৪৮/১৭৩৬) তিনি ইস্পাহানে গমন করেন এবং এরিস্টোটলীয় দর্শন, ইশরাকিয়া মতবাদ ও সুফীতত্ত্ব চর্চা করেন। সেখান থেকে তিনি কুম গমন করেন। এখানে তিনি হাম্বলী মাযহাবের উৎসাহী সমর্থকে পরিণত হন।

এখান থেকে তিনি তাঁর জন্মস্থান ওয়ায়নায় প্রত্যাবর্তন করেন তাঁর রচিত ‘কিতাবুত তাওহীদ’-এ লিপিবদ্ধ কট্টর তাওহীদ আশ্রিত মতবাদ প্রচার শুরু করেন। সেখানে তিনি নানা বাধার সম্মুখীন হলে পরিবার পরিজনসহ আরবের দারিয়ায় গমন করেন। দারিয়ার সর্দার মুহাম্মদ ইবনে সউদ তাঁর চিন্তাধারা গ্রহণ করেন এবং তা সংরক্ষণ ও প্রচারের দায়িত্বও গ্রহণ করেন। এভাবে উক্ত অঞ্চলের শাসনকর্তৃত্ব ইবনে সউদের হাতে থাকলেও মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী (র) ধর্মীয় ব্যাপারে মূল নেতৃত্বের অবস্থানে চলে আসেন।

১৭৬৫ সালে ইবনে সউদের ইন্তেকালের পর তার পুত্র আবদুল আযীযও মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব (র)-কে ধর্মীয় নেতারূপে বহাল রাখেন। একসময় ওহাবীরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলে। পরবর্তীতে অনেক উত্থান পতনের পর ১৯০৪ সালে ওহাবী নেতা আবদুল আযীয পুনরায় নজদে আধিপত্য অর্জন করতেসক্ষম হন এবং তারই বংশ অদ্যাবধি সৌদি আরব শাসন করে চলেছে। এই রাজকীয় পরিবার কর্তৃক মদদপুষ্ট ও আনুকূল্য প্রাপ্ত হয়ে ওহাবী মতবাদ অগ্রসর হয়ে চলেছে। ১৭৮৭ সালে এই মহান সংস্কারক ইন্তেকাল করেন।

উল্লেখ্য, মিসর, ইরাক, আফগানিস্তান, হিন্দুস্তান প্রভৃতি দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় কিছু আলেমও তাঁদের চিন্তাধারায় প্রভাবিত হন। মুহাম্মদ আবদুহু মিসরী, জামাল উদ্দীন আফগানী, খায়রুদ্দীন তিউনিসী, সিদ্দীক হাসান খান ভূপালী (ভারত), আমীর আলী (কলিকাতা) প্রমুখ তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

ওহাবিদের আকিদা

মূলত আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ও ওহাবীদের মধ্যে আকিদাগত মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের দেশে ওহাবী ও সুন্নী প্রশ্ন নিয়ে যে মতবিরোধ বা কোন্দল পরিলক্ষিত হয়, তা মূলত রাজনৈতিক। এর কোনো আকিদাগত ভিত্তি নেই। ওহাবী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল ওহাব নজদী (র) ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর একজন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের বিশিষ্ট আলেম ও সংগ্রামী নেতা।

তিনি মুসলিম সমাজে অনুপ্রবিষ্ট শিরক, বিদয়াত প্রভৃতি নানা কুসংস্কার ও সর্বপ্রকার শোষণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি সংগ্রাম করে জয়যুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর এ অর্জিত সাফল্যের কারণে তদানীন্তন ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদেরা তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারের সূচনা করে। তাঁকে জনসমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তার নাম মুহাম্মদ হওয়া সত্ত্বেও ওহাবী শব্দের আবিষ্কার করে এবং এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে যে, সাধারণ মানুষ ওহাবী বলতে ধর্মদ্রোহী বলে মনে করতে লাগল।

বর্তমানে ইংরেজদের প্ররোচনায় উদ্বুদ্ধ এক শ্রেণির ধর্ম ব্যবসায়ী হকপন্থি আলেমগণকে হেয় করার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে ওহাবী শব্দটিকে মোক্ষম অস্ত্ররূপে ব্যবহার করে চলেছে। দেওবন্দী আলেমগণ এবং কিছু কিছু ইসলামী দল যেহেতু ইংরেজদের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং বিদয়াত ও সর্বপ্রকার কুসংস্কারের বিরুদ্ধে অবিরত সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, তাই ইংরেজদের ভাড়াটিয়া তথাকথিত আলেম, পীর ও কিছু সংখ্যক কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী ওলামায়ে দেওবন্দ এবং হকপন্থি ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও দলকে ওহাবী অনুসারী ও কাফের বলে প্রচার করে। অথচ ওলামায়ে দেওবন্দ ও হকপন্থি ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও দল মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী (র)-এর বিতর্কিত উক্তির সম্পূর্ণ বিরোধী। ওহাবীদের আকিদাসমূহ নিম্নরূপ :

ওহাবী আদর্শে বিশ্বাসী আলেমগণের সাথে অন্যান্য হকপন্থি আলেমদের যে সকল বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে তা নিম্নরূপ-
১. তাকলীদ বা অনুসরণ প্রসঙ্গ
৩. দোয়ার মধ্যে অসীলা প্রসঙ্গ
২. তাসাওউফ প্রসঙ্গ
৪. তাবিজ কবচ প্রসঙ্গ
৫. বুযুর্গানে দীন ও অলী আউলিয়াদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান থেকে বরকত লাভ প্রসঙ্গ
৬. রওযায়ে আতহার যেয়ারতে যাওয়ার নিয়ত প্রসঙ্গ।

তাঁদের মতে, ১. পীর মুরিদী নাজায়েয।
২. মহানবী (স)-এর রওযা যেয়ারত করার জন্য সফর করা নাজায়েয।
৩. ঝাড় ফুঁক ও তাবিজ কবচ দেয়া এবং তা ব্যবহার করা নাজায়েয।

একটি পর্যালোচনা : ‘ওহাবী’ শব্দটি মূলত ইংরেজ ঐতিহাসিকদের উদ্ভাবিত একটি শব্দ। এ শব্দটি দ্বারা তারা মূলত আঠারো শতকের মধ্যভাগে জাযীরাতুল আরবে সৃষ্ট একটি আন্দোলনের অনুসারীদেরকে বুঝিয়ে থাকে। যে আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব (র)। আর এ আবদুল ওহাবের আন্দোলন ছিল মূলত শিরক, বিদয়াত এবং কায়েমী স্বার্থবাদীদের জুলুমের বিরুদ্ধে। আরব উপদ্বীপের যে অঞ্চলে নানা ধরনের কুসংস্কার, শিরক, বিদয়াত, বিভিন্ন ধরনের অনৈসলামিক রুসুমাত তথা প্রথা, কবর পূজা, পীরকে সেজদা করা, কবর ও মাযারের নামে মানত করা ইত্যাদি ধর্মের নামে প্রচলিত ছিল, সে অঞ্চলে তিনি এসব দূর করার জন্য যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, তাই ওহাবী আন্দোলন।

তাঁর এ সংস্কারমূলক কর্মসূচিতে মুগ্ধ হয়ে দারিয়া অঞ্চলের এক প্রভাবশালী গোত্রপতি ও জমিদার মুহাম্মদ ইবনে সউদ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব (র)-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এ সূত্র ধরেই সউদ পরিবারের সাথে তিনি বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন সউদ পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পর তার সংস্কার আন্দোলন আরো বেগবান হয়; কিন্তু ইংরেজ ও বিভিন্ন কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী তার এ আন্দোলনকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। তারা তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাতে থাকে। এমনকি এক শ্রেণির আলেমকে ক্রয় করে তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে তাকে কাফের বলে আখ্যা দেয়। এক্ষেত্রে ইংরেজদের পাশাপাশি ঐ আলেমরাও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

আর সে ষড়যন্ত্র আজো অব্যাহত আছে। আজকের যুগে আমরা দেখছি, যারা ইসলামের খাঁটি আমলকারী, সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসারী এবং কুরআন সুন্নাহ তথা ইসলামী জীবনবিধান সমাজ, দেশ ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্নভাবে কাজ করছে এবং পথভ্রষ্ট মানুষদেরকে পথের দিশা দেয়ার জন্য অক্লান্ত সাধনা ও পরিশ্রম করে যাচ্ছে, তাদেরকেই ওহাবী ফতোয়া দিয়ে নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাদেরকে রাসূল বিদ্বেষী ও কাফের আখ্যা দিয়ে নিজেদেরকে রাসূলপ্রেমিক ও ইসলাম দরদি প্রমাণের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সত্য একদিন প্রতিষ্ঠিত হবেই। সেদিন এ ওহাবী আন্দোলনের যথার্থতা অবশ্যই প্রমাণিত হবে।

আরো পড়ুন :

মুতাজিলা কারা

মুতাজিলা শব্দের অর্থ কি

মুতাজিলা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মতবাদ

মুতাজিলাদের পতনের ইতিহাস

মুতাজিলা সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক মতবাদ

মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও ইতিহাস

মুতাজিলা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে

শিয়াদের পরিচয়

শিয়া শব্দের অর্থ কি

শিয়াদের আকিদা এর মূলনীতি

শিয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস

খারেজীদের পরিচয়

খারেজী শব্দের অর্থ কি

খারেজীদের ধর্মীয় মতবাদ কি

ট্যাগ সমূহ : ওহাবি,ওহাবি শব্দের অর্থ কি,ওহাবি কারা, ওহাবী কি, ওহাবী আন্দোলনের উদ্দেশ্য কি ছিল, ওহাবী আন্দোলনের নেতা কে ছিলেন, ওহাবী কথার অর্থ কি, ওহাবি কথার অর্থ কি, ওহাবি মানে কি, ওহাবি শব্দের অর্থ কী, ওহাবি শব্দের অর্থ কি,ওহাবিদের আকিদা,ওহাবি মানে কি,ওহাবি অর্থ কি,ওহাবি কারা,ওহাবি আন্দোলন,ওহাবি কারা ও ওহাবি শব্দের অর্থ কি,

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top