ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি
ওযুর ফরজ কয়টি তা নিচে আলোচনা করা হলো- ওযু শব্দটি আরবি। এর অর্থ হচ্ছে- সুন্দর, পরিষ্কার, স্বচ্ছ। শরীয়তের পরিভাষায় নির্ধারিত নিয়মে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ওযু বলা হয়। আল্লাহ তা’আলা বান্দার নামাজের জন্য অজুকে ফরজ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“হে ঈমানদারগণ, যখন তোমরা সালাত বা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা মুখমন্ডল ও উভয় হাত কুনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে।” (সূরা মায়িদা : ৬)
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যার অজু নেই, তার নামাজ হবে না” (সুনানে আবু দাউদ : ১০১)
পবিত্রতা অর্জনকে আল্লাহ তা’আলা ফরজ করেছেন। ইবাদত বন্দেগীতে পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব অত্যধিক। কুরআনে এসেছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ভালবাসেন এবং যাহারা পবিত্র থাকে তাদের কেও ভালোবাসেন।” ( সূরা বাকারা : ২২২) পবিত্রতা ক্ষেত্র বিশেষ তা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব হয়ে থাকে। যারা নামাজ সহ ইবাদত বন্দেগী করে তাদের জন্য ওযু করা ফরজ। অজুর ফরজ কয়টি কি কি এ বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা কি বলেছেন; তা নিচে তুলে ধরা হলো-
অযুর ফরজ কয়টি তা নিচে দেওয়া হলো :
পবিত্র কোরআনের নির্দেশিত আয়াত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর হাদিস অনুযায়ী অযুর ফরজ চারটি নির্ধারিত হয়েছে। এ ফরজগুলো হচ্ছে-
১. মুখ মন্ডল পরিষ্কার করা।
২. কুনুইসহ দুই হাতের কব্জি পরিস্কার করা।
৩. মাথা মাসেহ করা।
৪. টাখনু সহ পা পরিষ্কার করা।
১. মুখ মন্ডল পরিস্কার করা : অযুর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে- মুখমন্ডল পরিষ্কার করা। দুই হাতে পানি নিয়ে মুখ মন্ডল ধুয়ার মাধ্যমে মুখের সব জীবাণু দূর হয়। এভাবে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত মুখে পানি দিতে থাকলে রোগ জীবাণু থেকেও মুক্ত থাকা সম্ভব। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; হাদিসে এসেছে, তিনি অজু করলেন এবং তার মুখমন্ডল ধুলেন। এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে অনুরূপ করলেন।
অর্থাৎ আরেক হাতের সঙ্গে মিলিয়ে মুখমন্ডল ধুলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে ডান হাত ধুলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে তার বাম হাত ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে ডান পায়ের উপর ঢেলে দিয়ে পা ধুয়ে ফেললেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে বাম পা ধুলেন। অতঃপর বললেন: আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে এভাবে অজু করতে দেখেছি।”( সহিহ্ বুখারী : ১৪২)
২. কুনুই সহ দুই হাতের কব্জি পরিস্কার করা : হাদিসে রয়েছে, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখমন্ডল পরিষ্কারের পর কুনুইসহ দুই হাতের কব্জি পরিস্কার করেছেন।” (বুখারী : ১৬৪ ও ১৮৫)
৩. মাথা মাসেহ করা : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দুই হাত ভিজিয়ে একবার মাসেহ করতেন। মাসেহ করার সময় তিনি দুই হাতের আঙ্গুল এক জায়গায় মিশিয়ে সামনের দিক হতে চুলের উপর দিয়ে পেছনে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যেতেন। আবার পেছন থেকে উভয় হাত টেনে যেখান থেকে শুরু করেছিলেন আবার সেখানে নিয়ে যেতেন। (সহিহ বুখারী : ১৮৫)
তারপর হাত ভিজিয়ে দুটি শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে দুই কানের ভেতর দিকে কানের ভাঁজে ভাঁজে ঘোরাতে হবে এবং দুটি বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে দুই কানের পিঠ অর্থাৎ বাইরের অংশ মাসেহ করতে হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১২১ ও ১৩৩)
৪. টাখনুসহ পা পরিষ্কার করা : হাদিসে এসেছে, “ডান পায়ের আঙ্গুলের মাথা হতে গোড়ালি ও টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধৌত করতে হবে।” (সহীহ মুসলিম : ২০৪৬)
আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, “পায়ের আঙ্গুল বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।” (মিশকাত হাদিস নং : ৪০৬৪ ও ৪০৭)
আমাদের করণীয় : নামাজ তথা ইবাদত-বন্দীগীতে অজুর গুরুত্ব অত্যাধিক। যখনই ইবাদত-বন্দেগী করার ইচ্ছা পোষণ করবে তখনই এই চারটি কাজ গুরুত্ব সহকারে ধারাবাহিক ক্রমে আদায় করতে হবে। তাছাড়া ওযুর সুন্নত রয়েছে যা পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হবে। আল্লাহ তা’আলা সবাইকে অজুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে ইবাদত বন্দেগী করার তৌফিক দান করুক। (আমিন)
আরো পড়ুন :
০১. সূরা ফাতিহা এর তাফসীর নামকরন ও শানে-নুযূল
আলহামদুলিল্লাহ এর ফজিলত ও গুরুত্ব এবং এর ব্যবহার বিস্তারিত
ট্যাগ সমূহ : ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি,ওযুর ফরজ কয়টি,ওযুর ফরজ কয়টি কি কি,ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী,ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি বিস্তারিত,ওযুর ফরজ কয়টি এবং কি কি |