ওযুর ফজিলত ও বরকত
ওযুর ফজিলত ও গুরুত্ব এর চেয়ে অধিক আর কি হতে পারে যে, স্বয়ং কুরআনে তার শুধু হুকুমই নেই, বরঞ্চ তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, অযুতে দেহের কোন্ কোন্ অঙ্গ ধুতে হবে। আর এ কথাও সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, অযু নামাযের অপরিহার্য শর্ত ।
يَايُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلوةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
“তোমরা যারা ঈমান এনেছো জেনে রাখো, যখন তোমরা নামাযের জন্য দাঁড়াবে তার আগে নিজেদের মুখমণ্ডল ধুয়ে নেবে এবং তোমাদের দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেবে এবং মাথা মাসেহ করবে এবং তারপর দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধুবে” । -(মায়েদাহঃ ৬)
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযুর ফযীলত ও বরকত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন— আমি কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের লোকদেরকে চিনে ফেলবো। কোনো এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, কেমন করে, হে আল্লাহর রাসূল? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এজন্য তাদেরকে চিনতে পারব যে, অযুর বদৌলতে আমার উম্মতের মুখমণ্ডল এবং হাত-পা উজ্জ্বলতায় ঝকঝক করবে ।
অন্য এক সময়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযুর মহত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি আমার বলে দেয়া পদ্ধতি অনুযায়ী ভালোভাবে অযু করবে এবং অযুর পর এ কালেমা শাহাদাত পড়বে- اَشْهَدُ اَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُة তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। তারপর সে যে দরজা দিয়ে খুশী জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম)
উপরন্তু তিনি আরও বলেন, অযু করার কারণে ছোটো খাটো গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং অযুকারীকে আখিরাতে উচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করা হয় এবং অযুর দ্বারা শরীরের সমস্ত গুনাহ ঝরে পড়ে (বুখারী, মুসলিম)।
আর একবার নবী আন্ডারার অযুকে ঈমানের আলামত বলে অভিহিত করে বলেন, হকের রাস্তায় ঠিকভাবে কায়েম থাক, আর তোমরা কখনো সত্য পথে অটল থাকার হক আদায় করতে পারবে না। (সে জন্য নিজেদের ভুলত্রুটি ও অক্ষমতা সম্পর্কে সজাগ থাক) এবং ভাল করে জেনে রাখ যে, তোমাদের সকল আমলের মধ্যে নামায উৎকৃষ্টতম এবং অযুর পুরোপুরি রক্ষণাবেক্ষণ তো শুধু মু’মিনই করতে পারে । -(মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক, ইবনে মাজাহ)
নামাজের ওযু করার নিয়ম
অযুকারী প্রথমে মনে মনে এ নিয়ত করবে, আমি শুধু আল্লাহকে খুশী করার জন্য এবং তাঁর কাছ থেকে আমলের প্রতিদান পাবার জন্য অযু করছি তারপর بسم الله الرحمن الرحيم (উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম) বলে অযু শুরু করবে এবং নিম্নের দোয়া পড়বে । -(আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ী)
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي وَوَسِعُ لِي فِي دَارِي وَبَارِكْ لِي فِي رِزْقِ –
“হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ কর, আমার বাসস্থান আমার জন্য প্রশস্ত করে দাও এবং রুযীতে বরকত দাও” । -(নাসায়ী)
হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা) বলেন, আমি নবী আলাইহি-এর জন্য অযুর পানি আনলাম । তিনি অযু করা শুরু করলেন । আমি শুনলাম যে, তিনি অযুতে এ দোয়া পড়ছিলেন اللهم اغفر لي ذنبي (উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলী জানবী) আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এ দোয়া পড়ছিলেন? তিনি বললেন, আমি দ্বীন ও দুনিয়ার কোন্ জিনিস তাঁর কাছে চাওয়া ছেড়ে দিয়েছি?
অযুর জন্য প্রথমে ডান হাতে পানি নিয়ে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত খুব ভালো করে তিনবার ঘষে ধুতে হবে। তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে তিনবার কুলি করতে হবে । মিসওয়াকও করতে হবে । কোনো সময়ে মিসওয়াক না থাকলে শাহাদাত আঙুলি দিয়ে ভালো করে ঘষে দাঁত সাফ করতে হবে। রোযা না থাকলে তিনবারই গড়গড়া করে কুলি করতে হবে । তার উদ্দেশ্য গলদেশের ভেতর পর্যন্ত পানি পৌছানো । তারপর তিনবার এমনভাবে নাকে পানি দিতে হবে যেন নাসিকার ভেতর পর্যন্ত পৌঁছে। অবশ্য রোযার সময় সাবধানে কাজ করতে হবে। তারপর বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে নাক সাফ করতে হবে । প্রত্যেকবার নাকে নতুন পানি দিতে হবে ।
তারপর দু’হাতের তালু ভরে পানি নিয়ে তিনবার সমস্ত মুখমণ্ডল (চেহারা) এমনভাবে ধুতে হবে যেন চুল পরিমাণ স্থানও শুকনো না থাকে । দাঁড়ি ঘন হলে তার মধ্যে খিলাল করতে হবে যেন চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছে যায় । চেহারা ধুবার সময় এ দোয়া পড়তে হবে :- اللهم بيض وجهي يوم تبيض وجوه وتسود وجوه “হে আল্লাহ! আমার চেহারা সেদিন উজ্জ্বল করে দিও যেদিন কিছু লোকের চেহারা উজ্জ্বল হবে এবং কিছু লোকের মলিন হবে ।”
তারপর দু’হাত কনুই পর্যন্ত ভালো করে ঘষে ঘষে ধুবে । প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাত তিনবার করে ধুতে হবে। হাতে আংটি থাকলে এবং মেয়েদের হাতে চুড়ি-গহনা থাকলে তা নাড়াচাড়া করতে হবে যেন ভালোভাবে পানি সবখানে পৌঁছে । হাতের আঙুলগুলোতে আঙুল দিয়ে খিলাল করতে হবে । তারপর দু’হাত ভিজিয়ে মাথা এবং কান মাসেহ করতে হবে।
মাসেহ করার পদ্ধতি
মাসেহ করার পদ্ধতি এই যে, বুড়ো এবং শাহাদাত আঙুলি আলাদা রেখে বাকী দু’হাতের তিন তিন আঙুলি মিলিয়ে আঙুলিগুলোর ভেতর দিক দিয়ে কপালের চুলের গোড়া থেকে পেছন দিকে মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ করতে হবে। তারপর দু’হাতের হাতুলির পেছন দিক থেকে সামনের দিকে টেনে মাথার তিন চতুর্থাংশ মাসেহ করতে হবে। তারপর শাহাদাত আঙুলি দিয়ে কানের ভেতরের অংশ এবং বুড়ো আঙুলি দিয়ে কানের বাইরের অংশ মাসেহ করতে হবে। তারপর দু’হাতের আঙুলিগুলোর পিঠ দিয়ে ঘাড় মাসেহ করতে হবে। গলা মাসেহ করতে হবে না। এ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য এই যে, এভাবে কোনো অংশ মাসেহ করতে হাতের ঐ অংশ দ্বিতীয় বার ব্যবহার করতে হবে না যা একবার ব্যবহার করা হয়েছে।
মাসেহ করার পর দু’পা টাখনু পর্যন্ত তিন তিনবার এমনভাবে ধুতে হবে যে, ডান হাত দিয়ে পানি ঢালতে হবে এবং বাম হাত দিয়ে ঘষতে হবে। বাম হাতের ছোট আঙুল দিয়ে পায়ের আঙুলগুলোর মধ্যে খিলাল করতে হবে । ডান পায়ে খিলাল ছোট আঙুল থেকে শুরু করে বুড়ো আঙুলে শেষ করতে হবে। বাম পায়ে বুড়ো আঙুল থেকে ছোট আঙুল পর্যন্ত করতে হবে। অযুর কাজগুলো পরপর করে যেতে হবে। অর্থাৎ একটার পর সংগে সংগে অন্যটি ধুতে হবে। খানিকক্ষণ থেমে থেমে করা যেন না হয়।
অযু শেষ করে আসমানের দিকে মুখ করে তিনবার এ দোয়া পড়তে হয় ।
أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدا عبده ورسوله -اللهم اجعلني من التوابين واجعلني من المتطهرين –
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক তাঁর কোনো শরীক নেই । আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দাহ ও রাসূল । হে আল্লাহ! আমাকে ঐসব লোকের মধ্যে শামিল কর যারা বেশী বেশী তওবাকারী এবং আমাকে ঐসব লোকের মধ্যে শামিল কর যারা বেশী বেশী পাক-সাফ থাকে।”
আরো পড়ুন :
ট্যাগ সমূহ : অযুর ফযীলত, ওযুর ফজিলত, ওযুর ফজিলত সম্পর্কে, ওযুর নামাজের ফজিলত, ওযুর ফজিলত সম্পর্কে হাদিস, অযুর ফজিলত, অজুর ফজিলত, অজু থাকার ফজিলত, ওযুর গুরুত্ব ও ফজিলত, ওজুর ফজিলত, ওযু করার ফজিলত,নামাজের ওযু করার নিয়ম,অযুর মাসনূন তরিকা,মাসেহ করার পদ্ধতি,ওযুর ফজিলত সম্পর্কে হাদিস,ওযুর ফজিলত,অযুর গুরুত্ব ও ফজিলত |