আহমদিয়া সম্প্রদায় কারা ও তাদের পরিচয়

আহমদিয়া,আহমদিয়া সম্প্রদায় কারা,আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়,আহমদিয়া কারা,আহমদিয়া কে,আহমদিয়া সম্প্রদায়ের,আহমদিয়া সম্প্রদায়,আহমদিয়া সম্প্রদায়,আহমদিয়াদের পরিচয়,আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আকিদা,আহমদিয়াদের আকিদা,

আহমদিয়া সম্প্রদায় কারা ও তাদের পরিচয়

আহমদিয়া বা কাদিয়ানী মতবাদের প্রবর্তক মির্জা গোলাম আহমদ ভারতের পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুর জেলার অন্তর্গত কাদিয়ান নামক গ্রামের অধিবাসী। কাদিয়ান গ্রামের অধিবাসী বলেই তাকে কাদিয়ানী এবং তার অনুসারীদেরকে কাদিয়ানী সম্প্রদায় বলে অভিহিত করা হয়। মির্জা গোলাম আহমদ ১৮৪০ সালে জন্মগ্রহণ করে। পিতার নাম মির্জা গোলাম মুর্তা। সে ছিল পিতার কনিষ্ঠ সন্তান। তার পিতা মির্জা গোলাম মুর্তা ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের একজন আস্থাভাজন বিশ্বস্ত অনুচর ও জমিদার।

এ পরিবারটি ছিল ইংরেজ সরকারের বড়ই হিতাকাঙ্ক্ষী। মির্জা গোলাম মুর্তা নিজেকে ইংরেজ সরকারের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছিল। সিপাহী বিপ্লবের সময় সে ৫০টি ঘোড়া ক্রয় করে ৫০ জন অশ্বারোহী সৈন্য দিয়ে ইংরেজদেরকে সাহায্য করেছিল । অন্য একটি যুদ্ধে চৌদ্দ জন সৈন্য দিয়ে সাহায্য করেছিল। তার জ্যেষ্ঠ ভাই মির্জা গোলাম কাদেরও ব্রিটিশ সরকারের খেদমতে আন্তরিকভাবে নিয়োজিত ছিল। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ হয়ে সে দেশপ্রেমিক আযাদী আন্দোলনের বীর সৈনিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল ।

মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ব্যক্তিগতভাবে মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত উর্দু, ফারসি, আরবি ও কিছু ইংরেজি পড়াশোনা করেন। কয়েক বার মোক্তারি পরীক্ষা দিয়েও পাস করতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে শিয়ালকোট আদালতে কেরানির চাকরি নেয়।

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আকিদা :

কাদিয়ানী তথা আহমদিয়া আকিদার মূলনীতিসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১. নবুয়তের ধারাবাহিকতা হযরত মুহাম্মদ (স) পর্যন্ত শেষ নয় এবং তিনি শেষ নবীও নন; বরং নবুয়তের ধারাবাহিকতা তারপরও চলতে থাকবে। অতএব মির্জা গোলাম আহমদও পূর্ববর্তী নবীগণের মতো একজন নবী। যে ব্যক্তি মির্জা গোলাম আহমদকে নবী বলে স্বীকার করবে না সে মুসলমান নয়; বরং কাফের।

২. মির্জা গোলাম আহমদের ওপর বারিধারার মতো সর্বদা আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী এসেছে। তা কখনো আরবি ভাষায়, কখনো উর্দু ভাষায়, কখনো হিন্দি ভাষায়, কখনো ইবরানী ভাষায়, আবার কখনো এমন ভাষায় যা বুঝে আসে না।

৩. পরকালীন সফলতা ও মুক্তি একমাত্র মির্জা গোলাম আহমদের তালীম ও তার ওপর অবতীর্ণ অহীর প্রতি ঈমান রাখার ওপর নির্ভরশীল।
৪. মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত পয়গাম্বর। খতমে নবুয়তের আকিদা অভিশপ্ত ও মারদূদ।

৫. জেহাদ একটি অমানুষিক বর্বরতাপূর্ণ কাজ। তাই কাফেরদের সাথে মোকাবেলা করা, জেহাদ করা হারাম।
৬. হযরত ঈসা (আ) মৃত্যুবরণ করেছেন। তাকে জীবিত মনে করা শিরক। কেয়ামতের পূর্বে আর কখনো তিনি এ পৃথিবীতে ফিরে আসবেন না।

৭. দাজ্জাল খ্রিস্টান পাদ্রিদেরই একটি দল এবং ইয়াজুজ মাজুজ হলো রাশিয়ার এক বিশেষ সম্প্রদায়ের নাম। আর আমি (মির্জা গোলাম আহমদ) হলাম মাসীহে মাওউদ ।
৮. হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মুজিযার সংখ্যা তিন হাজার আর মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মুজিযার সংখ্যা দশ লক্ষ।

৯. বুরূজী যিল্লী বা ছায়ানবী হওয়া সম্পর্কে তার উক্তি হলো- আমি ধ্যানধারণা ও সাধনার বলে আধ্যাত্মিকতার এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছি যে, আমার আত্মা ও দেহ হযরত মুহাম্মদ (স)-এর দেহ ও আত্মার মধ্যে এমনভাবে বিলীন হয়ে গেছে যে, আমি মুহাম্মদ (স)-এর দেহ ও আত্মায় রূপান্তরিত হয়ে এক অভিন্ন দেহ ও আত্মার অধিকারী হয়েছি। তাই আমাকে যিল্লী বা বুরূজী নবী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

১০. স্বতন্ত্র নবী হওয়া সম্পর্কে তার উক্তি হলো, আমি সে আল্লাহর শপথ করে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ, তিনিই আমাকে প্রেরণ করেছেন। তিনি আমার নাম নবী রেখেছেন। তিনি আমাকে মাসীহে মাওউদ নামে ডেকেছেন। তিনিই আমার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য অনেক নিদর্শন পেশ করেছেন, যার সংখ্যা তিন লাখ পর্যন্ত পৌঁছেছে।

১১. মির্জা গোলাম আহমদের দাবির সংখ্যা ছিল ৫০টি। এসব দাবির অনেকটা পরস্পরবিরোধীও ছিল আবার বিচিত্রও ছিল। যেমন- মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবি, ইমাম হওয়ার দাবি, খলিফা হওয়ার দাবি, ইমাম মাহদী হওয়ার দাবি, নবী হওয়ার দাবি, রাসূল হওয়ার দাবি, তার নিকট অহী আসার দাবি, পড়ার মতো কুরআন নাযিল হওয়ার দাবি, সকল নবীর সমকক্ষ হওয়ার দাবি। এছাড়া সকল নবী রাসূল থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবি, আহমদ হওয়ার দাবি, মুহাম্মদ হওয়ার দাবি, মুহাম্মদ (স)-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবি, তাকে সৃষ্টি করা না হলে আসমান যমীন কিছুই সৃষ্টি করা হতো না বলে দাবি, শ্রীকৃষ্ণের অবতরণ হওয়ার দাবি, শ্রীকৃষ্ণ হওয়ার দাবি, আল্লাহর যেমন ৯৯টি নাম আছে তারও তেমন ৯৯টি নাম আছে বলে দাবি।

বিশ্বের হকপন্থি আলেমগণের মতে, আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ও ওহাবী সত্যনিষ্ঠ ইসলামী দল। আর কাদিয়ানী একটি কুফরী মতবাদ। যেহেতু তারা খতমে নবুয়তকে অস্বীকার করে, সেহেতু ঐ মতবাদে যারা বিশ্বাসী তারা সকলেই নিঃসন্দেহে কাফের । সুতরাং সকল মুসলমানের আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের দলভুক্ত হওয়া এবং আহমদিয়া আকিদা বিশ্বাস ও তাদের দল হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকা ঈমানের অপরিহার্য দাবি।

আরো পড়ুন :

মুতাজিলা কারা

মুতাজিলা শব্দের অর্থ কি

মুতাজিলা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মতবাদ

মুতাজিলাদের পতনের ইতিহাস

মুতাজিলা সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক মতবাদ

মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও ইতিহাস

মুতাজিলা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে

ওহাবি কারা ও ওহাবি শব্দের অর্থ কি

শিয়াদের পরিচয়

শিয়া শব্দের অর্থ কি

শিয়াদের আকিদা এর মূলনীতি

শিয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস

খারেজীদের পরিচয়

খারেজী শব্দের অর্থ কি

খারেজীদের ধর্মীয় মতবাদ কি

ট্যাগ সমূহ : আহমদিয়া,আহমদিয়া সম্প্রদায় কারা,আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়,আহমদিয়া কারা,আহমদিয়া কে,আহমদিয়া সম্প্রদায়ের,আহমদিয়া সম্প্রদায়,আহমদিয়া সম্প্রদায়,আহমদিয়াদের পরিচয়,আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আকিদা,আহমদিয়াদের আকিদা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top