আবু হুরায়রা রাঃ এর জীবনী
হযরত আবু হোরায়রা (রা)-এর জীবনী : যে সকল রাবী মহানবী (স)-এর হাদীস প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করে এ বিশ্বে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁদের মধ্যে হযরত আবু হোরায়রা (রা) একটি সর্বাধিক পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য নাম। তিনি মহানবী (স) হতে সর্বাধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন। নিম্নে তাঁর পরিচিতি ও অন্যান্য তথ্য উপস্থাপন করা হলো।
১. নাম ও পরিচয় :
হযরত আবু হোরায়রা (রা)-এর প্রকৃত নাম নির্ণয়ে ওলামায়ে কেরামের মাঝে বিভিন্ন অভিমত পরিলক্ষিত হয়। যেমন- ইবনে মাজাহ গ্রন্থের হাশিয়ায় প্রায় ত্রিশটি নামের উল্লেখ রয়েছে। প্রসিদ্ধ নামগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো- ১. আবদুর রহমান, ২. আবদে শামস, ৩. আবদে আমর, ৪. আবদুল্লাহ, ৫. সাঈদ, ৬. আমের, ৭. ইবনে ওমায়ের, ৮. ইয়াযিদ, ৯. আমর। ইসলামগ্রহণের পরে ও পূর্বে তাঁর নাম : এক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ আলেমগণের সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য অভিমত হচ্ছে, ইসলামগ্রহণের পূর্বে তাঁর নাম ছিল আবদে শামস অথবা আবদে আমর এবং ইসলামগ্রহণের পর তাঁর নাম রাখা হয় আবদুল্লাহ অথবা আবদুর রহমান। উপনাম আবু হোরায়রা। এ নামেই তিনি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ।
৩. জন্ম :
তিনি হিজরতের প্রায় ২২/২৩ বছর পূর্বে (৫৯৫-৬০০ খ্রিস্টাব্দে) জন্মগ্রহণ করেন।
৪. পিতামাতার নাম :
তাঁর পিতার নাম সাখর। এছাড়াও তাঁর পিতার আরো কয়েকটি নাম রয়েছে। যেমন- ক. ওমায়ের, খ. আশরাকা, গ. আমর, ঘ. আয়েয। এ নামগুলোর মধ্যে সাখর নামটি প্রসিদ্ধ হওয়ার কারণে হযরত আবু হোরায়রা (রা) আবদুর রহমান ইবনে সাখর নামেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর মাতার নাম উম্মিয়া বিনতে সাফীহ অথবা মাইমুনা।
৫. নিসবত ও গোত্র পরিচিতি :
তাঁর গোত্র পরিচিতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ ধারণাপ্রসূত মন্তব্য করে বলেন, সম্ভবত তাঁর পূর্বপুরুষদের কারো নাম দাউস থাকায় তাঁকে দাউসী বলা হতো। অথবা তাঁকে আযদী বলা হতো। কারণ তিনি দক্ষিণ আরবের আযদ গোত্রের মুসলিম ইবনে ফাহম বংশোদ্ভূত।
৬. আবু হোরায়রা নামে প্রসিদ্ধিলাভের রহস্য :
আরবি ভাষায় اب শব্দের অর্থ— পিতা। আর هريرة শব্দটি هرة -এর تصغير তথা ক্ষুদ্রতাবাচক। অর্থ- বিড়ালছানা। সুতরাং ابو هريرة শব্দের অর্থ হলো- বিড়ালছানার পিতা। আরবদের ব্যবহারে জীবজন্তু বা পদার্থের পূর্বে । শব্দ যুক্ত হলে তার অর্থ হয় মালিক। সুতরাং ابو هريرة অর্থ- বিড়ালছানার মালিক। তবে এ নামে প্রসিদ্ধিলাভের কারণ সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের কয়েকটি অভিমত পরিলক্ষিত হয়। যেমন-
ক. জমহুর ওলামার মতে, তিনি বিড়ালছানা খুব ভালোবাসতেন এবং পুষতেন। একদিন তিনি রাসূল (স)-এর দরবারে উপস্থিত হলেন। এ সময় অকস্মাৎ তাঁর জামার আস্তিন হতে একটি বিড়ালছানা বের হয়ে পড়ল। রাসূল (স) তখন রসিকতা করে তাঁকে ابو هريرة (বিড়ালছানার পিতা) বলে সম্বোধন করেন। প্রিয়নবী (স)-এর মুখনিঃসৃত বাণীতে আবু হোরায়রা নিজেকে গর্বিত মনে করেন এবং এটাকে নিজের নাম বানিয়ে নেন। এরপর থেকে তিনি ابو هريرة নামেই প্রসিদ্ধিলাভ করেন।
খ. শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (র) বলেন- إنما سمى ابا هريرة لانه كان له مرة صغيرة يحملها معه
গ. ফাতহুল মুলহিম গ্রন্থকার বলেন, তিনি বিড়ালছানা অত্যধিক ভালোবাসতেন বিধায় এ নামে ভূষিত হন।
ঘ. কতিপয় আলেম বলেন, কোনো কারণে তার পিতা এ উপনামটি আদর করে রাখেন।
ইসলামগ্রহণ :
সর্বসম্মত মতানুসারে তিনি ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে ৩৪ বছর বয়সে খায়বার যুদ্ধের সময় ইসলামগ্রহণ করেন এবং এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এরপর থেকে তিনি স্থায়ীভাবে আহলে সুফফার সদস্য হয়ে যান।
৮. রাসূল (স)-এর সাহচর্য :
ইসলামগ্রহণের পর আবু হোরায়রা (রা) সর্বদা রাসূল (স)- এর সাহচর্যে থাকতেন । তিনি ছিলেন আহলে সুফফার স্থায়ী সদস্য।
৯. বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা :
সাহাবায়ে কেরামের মাঝে তিনিই সর্বাধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ৫৩৭৪টি। কেউ কেউ বলেন, তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ৫৫৭৫টি। তন্মধ্যে মুত্তাফাকুন আলাইহি হাদীস ৩২৫টি। শুধু বুখারীতে ৭৯টি এবং মুসলিমে ৯৩টি হাদীস স্থান পেয়েছে।
১০. তাঁর স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য মহানবী (স) কর্তৃক দোয়া :
হযরত আবু হোরায়রা (রা) প্রথমে হাদীস শুনে মুখস্থ রাখতে পারতেন না। মহানবী (স)-কে এ বিষয়ে জানালে তিনি বললেন- ابسط رداءك অর্থাৎ, তোমার চাদর বিছিয়ে দাও। মহানবী (স) এতে বরকত দান করার পর তিনি একটি হাদীসও ভোলেননি।
১১. তাঁর নিকট হতে হাদীস বর্ণনাকারীগণ :
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম বুখারী ও আইনী (র) বলেন, আটশতেরও বেশি সাহাবী ও তাবেয়ী এ প্রখ্যাত সাহাবীর নিকট হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১২. আসহাবে সুফফার সদস্য :
তিনি ছিলেন আহলে সুফফার অন্যতম সদস্য। রাসূল (স)-এর দরবারে হাদীয়াস্বরূপ যা আসত, তা থেকে তিনি ভক্ষণ করতেন।
১৩. রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন :
তিনি শরীয়তের বিভিন্ন বিষয়ে প্রভূত জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। হযরত ওমর (রা)-এর সময় তিনি বাহরাইন প্রদেশের শাসনকর্তা এবং মুয়াবিয়া (রা)-এর খেলাফতকালে মদিনার শাসক মারওয়ানের স্থলাভিষিক্ত হন।
১৪. শারীরিক গঠন :
হযরত আবু হোরায়রা (রা)-এর দেহের রং ছিল গৌর। অন্য বর্ণনায় কিঞ্চিত গৈরিক, দু’কাঁধ ছিল প্রশস্ত আর মেজাজ ছিল নম্র।
১৫. চরিত্র মাধুর্য :
হযরত আবু হোরায়রা (রা) খুবই উঁচুস্তরের মুত্তাকী ছিলেন। খুবই সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। আহার-বিহারে অত্যন্ত স্বাভাবিক ও অমনোযোগী ছিলেন। তাঁর মেধা ও অসাধারণ ব্যুৎপত্তির কারণে হযরত ওমর (রা) তাঁকে বাহরাইনের শাসনকর্তা নিয়োগ করেছিলেন। তাঁর সরলতা, ‘সততা এবং বিশ্বস্ততা ছিল প্রশ্নাতীত। রাসূল (স)-এর বহু গুরুত্বপূর্ণ হাদীস এবং ইসলামের বহু দুর্লভ জ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে তাঁর অবদান অপরিসীম।
১৬. ইন্তেকাল :
হযরত আবু হোরায়রা (রা) হিজরী ৫৯ সালে ৭৮ বছর বয়সে মদিনার অদূরে কাসবা নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন।
১৭. তাঁর জানাযা ও দাফন :
হযরত ওলীদ ইবনে ওকবা (রা) তাঁর জানাযা পড়ান। সাহাবীগণের মধ্য থেকে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ও আবু সাঈদ খুদরী (রা) তাঁর জানাযায় শরীক হন। তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়।
আরো পড়ুন :
ট্যাগ সমূহ : আবু হোরায়রা (রা), আবু হুরায়রা রাঃ, আবু হুরায়রা রাঃ এর জীবনী,আবু হুরায়রা রাঃ এর হাদিস,আবু হুরায়রা রা জীবনী,আবু হুরায়রা নাম রাখা যাবে কি,আবু হুরায়রা নামের অর্থ কি,Abu Hurayra, আবু হুরায়রা এর জীবনী,আবু হুরায়রা (রা.)আবু হুরায়রা অর্থ,,আবু হুরায়রা কে ছিলেন, আবু হুরায়রা (রা) এর পর সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন,আবু হুরায়রা বিতর্ক,আবু হুরায়রা রাঃ এর হাদিস,আবু হুরায়রা রাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী,আবু হুরায়রার সংক্ষিপ্ত জীবনী,আবু হুরাইরা রাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী,আবু হুরায়রা জীবনী,হযরত আবু হুরায়রার সংক্ষিপ্ত জীবনী, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) জীবনী, আবু হুরায়রা রা এর জীবনী, আবু হুরায়রা রাঃ কতো গুলো হাদিস বর্ণনা করেছেন, |