গহনা ও অলংকারের যাকাত
সোনা চাঁদি যে আকারেই হোক তার ওপর যাকাত ওয়াজিব। তা সে মুদ্রা হোক, খণ্ড, তারব্রকেড হোক, অথবা কাপড়ের ওপর সোনার জরির কাজ হোক, অথবা কাপড় বুনোনে সোনা বা সোনা চাঁদির চিকন তার হোক, অথবা মেয়েদের ব্যবহারের অলংকার হোক, প্রত্যেক বস্তুর ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে।
ইয়ামেনের জনৈকা মহিলা নবী (স)-এর খেদমতে হাজির হলো, তার সাথে তার মেয়ে ছিল যার হাতে সোনার দুটি মোটা কংকন ছিল। নবী (স) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এর যাকাত দাও ? সে বললো, জি-না, যাকাত তো দিই না । নবী (স) বললেন, তুমি কি এটা পসন্দ করো যে, কেয়ামতের দিন ঐ অপরাধে তোমাকে আগুনের কংকন পরিয়ে দেয়া হবে। একথা শুনে মহিলাটি দুটি কংকন খুলে নবীর হাতে দিয়ে বললো, এগুলো আল্লাহ ও রসূলের সন্তুষ্টির জন্যে পেশ করছি ।-(নাসায়ী)
হযরত উম্মে সালমা (রা) বলেন, আমি কংকন পরতাম এবং একদিন নবী (স)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ! এটা কান্য্ (যে সঞ্চিত সম্পদে যাকাত দেয়া হয় না) বলে গণ্য হবে ? তিনি বললেন, যে মাল যাকাত দেয়ার পরিমাণে পৌঁছে এবং তার যাকাত দেয়া হয় তা কানয্ নয়।-(আবু দাউদ)
অলংকারের যাকাত সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে আল্লামা মওদূদী বলেন : অলংকারের যাকাত সম্পর্কে কয়েকটি অভিমত আছে। একটি অভিমত এই যে, এর ওপর যাকাত ওয়াজিব নয়। কর্জ হিসেবে তা দেয়াটাই তার যাকাত। এ হচ্ছে আনাস বিন মালেক, সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব এবং শাবীর উক্তি। দ্বিতীয় অভিমত এই যে, অলংকারের যাকাত জীবনে একবার দিলেই যথেষ্ট হবে। তৃতীয় অভিমত এই যে, যে অলংকার সর্বদা ব্যবহার করা হয় তার ওপর যাকাত নেই। যা অধিক সময়ে তুলে রাখা হয় তার ওপর যাকাত ওয়াজিব। চতুর্থ অভিমত এই যে, সব রকমের অলংকারের যাকাত ওয়াজিব।
আমাদের মতে এ সর্বশেষ অভিমতটি সঠিক। প্রথমত, যেসব হাদীসে সোনা চাঁদির ওপর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার হুকুম রয়েছে তার শব্দগুলো সাধারণ। যেমন চাঁদির ওপর শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত এবং পাঁচ উকিয়ার কম হলে তার ওপর যাকাত নেই। বিভিন্ন হাদীস ও ‘আসার’ থেকে জানা যায় যে, অলংকারের ওপর যাকাত ওয়াজিব। আবু দাউদ, তিরমিযি ও নাসায়ীতে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত আছে যে, একজন নারী নবী (স)-এর দরবারে আসে এবং তার সাথে তার মেয়ে ছিল। তার দুটি হাতে সোনার কংকন ছিল। নবী (স) বললেন, তুমি এর যাকাত দাও ? সে বললো, না। তখন নবী (স) বলেন, তুমি কি পসন্দ কর যে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ্ তোমাকে তার বদলে আগুনের কংকন পরিয়ে দেবেন ?
উপরন্তু মুয়াত্তা, আবু দাউদ ও দারে কুতনীতে নবী (স)-এর এ উক্তি নকল করা হয়েছে ما اديت زكواته فليس بكنز যে অলংকারের যাকাত তুমি দিয়েছ তা কানয্ নয়। ইবনে হায্য বলেন, হযরত ওমর (রা)-ও তাঁর গভর্নর আবু মূসা আশয়ারীকে যে ফরমান পাঠান, তাতে এ হেদায়াত ছিল মুসলমান মেয়েলোকদেরকে আদেশ কর তারা যেন তাদের অলংকারের যাকাত দেয়।
হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- অলংকারের যাকাত সম্পর্কে হুকুম কি? তিনি বলেন, যখন তা দু’শ দিরহাম পরিমাণ হবে তখন তার যাকাত দিতে হবে। এ ধরনের উক্তি সাহাবাদের মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এবং আয়েশা (রা) এবং তাবেঈনদের মধ্যে সাঈদ বিন বুহাইর, সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব, আতা, মুজাহিদ, ইবনে সিরীন ও যুহরী এবং ফেকার ইমামদের মধ্যে সুফিয়ান সাওরী,আবু হানিফা ও তার সংগীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন :
শতকরা কত পার্সেন্ট যাকাত দিতে হয়
যাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কি কি
যে সব সম্পদের যাকাত দিতে হয় না
মুদ্রা ও নোটের যাকাত এর পরিমাণ
ট্যাগ সমূহ : গহনা ও অলংকারের যাকাত,নারীদের ব্যবহৃত অলংকারে যাকাত,অলংকারের যাকাত,মহিলাদের অলংকারের যাকাত,ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত,গহনার যাকাত,স্বর্ণের যাকাত,অলংকারে যাকাত সর্ম্পকে হাদিস,অলংকারে যাকাত সর্ম্পকে হাদিস,অলংকারে যাকাত সর্ম্পকে হাদিস |