অযুর দোয়া ও নিয়ম
অযুর দোয়া : অজু পবিত্রতা অর্জনের ও নামায আদায়ের প্রধান মাধ্যম। কারণ, নামাযের জন্য অজু ফরয। হাদিসে অজুকে নামাজের চাবি বলা হয়েছে। আর নামাযকে বলা হয়েছে জান্নাতের চাবি। অজুতে কয়েকটি দোয়া রয়েছে। হাদিসে সেগুলো বর্ণিত হয়েছে। নিচে অযুর দোয়া ও নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হলো-
অজুর শুরুতে যে অযুর দোয়া পড়বে
যখন অজু করা শুরু করবে তখন بسم الله الرحمن الرحيم ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলা মুস্তাহাব। আর যদি কেবল بسم الله ‘বিসমিল্লাহ’ বলে তাও চলবে। শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে গেলে মাঝখানে পড়ে নিবে। আর যদি অজুর শেষে মনে হয়, তাহলে আর বলবে না। অজু শুদ্ধ হয়ে যাবে। চাই তা ইচ্ছাকৃত হোক বা ভুলক্রমে হোক । এটা আমাদের ও সংখ্যাগরিষ্ট উলামায়ে কেরামের মাজহাব ।
বিসমিল্লাহর ব্যাপারে অনেক যয়ীফ হাদিসও আছে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, অজুর মধ্যে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে; আল্লাহর রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত এরূপ কোনো হাদিস আমার জানা নেই। কিছু হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো—
আবু হুরায়রা রাযি. আল্লাহর রাসূল ﷺ থেকে বর্ণনা করেন—
لا وُضُوءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللهِ عَلَيْهِ .
অর্থ : যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহ পড়ল না, তার অজু হয়নি। (অর্থাৎ, তার অজু পূর্ণাঙ্গ হয়নি)
[সুনানে আবু দাউদ: ১০১, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৯৯]
অজুর শুরুতে যে অযুর দোয়া পড়বে
শাইখ আবুল ফাতাহ নাসর মাকদিসি যাহেদ রহ. বলেন, অজুকারীর জন্য বিসমিল্লাহ বলার পর এ কালিমা পড়া মুস্তাহাব-
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُهُ
উচ্চারণ: আশহাদু-আল্লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু-ওয়াহদাহু-লা-শারিকা-লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কোনো মাবুদ নেই। তার কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মাদ সা: তাঁর বিশেষ বান্দা ও শেষ রাসুল।
আরো পড়ুন : অযুর সুন্নত কয়টি
উক্ত কালিমা পড়লে সমস্যা নেই। তবে এটি সুন্নাত হওয়ার বিষয়ে কোনো দলীলপাওয়া যায় না। উলামায়ে কেরামের কেউ এটি পড়া সুন্নাত বলেননি। আল্লাহ তা’আলা ভালো জানেন।
অজুর শেষে যে অযুর দোয়া পড়বে
অজুর শেষে এ দুআ পড়বে-
أَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، اللهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَابِيْنَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَفِرِينَ، سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَن لَّا إلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ .
উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া আল্লাহর রাসুলুহু। আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাত- তাওয়াইবনো ওয়াজ আলনি মিনাল মুতাতহহিরিন। সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মাদ সা: তাঁর বিশেষ বান্দা ও শেষ রাসূল। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আমাকে পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন। হে আল্লাহ! আমরা আপনার পবিত্রতার গুণগান করি। আপনি ব্যতীত আর কোনো মাবুদ নেই বলে সাক্ষ্য দিচ্ছি। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি ।
অজুর অঙ্গসমূহ ধোয়ার সময়ে যে অযুর দোয়া
অজুর অঙ্গসমূহ ধোয়ার সময় পড়ার মতো কোনো দুআ আল্লাহর রাসূল সাঃ থেকে বর্ণিত হয়নি। ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, নেককার পূর্বসূরিদের থেকে বিভিন্ন বর্ণনায় কিছু দুআ এসেছে, যেগুলো পড়া মুস্তাহাব। ফিকহে হানাফীতে দুআগুলো একটু ভিন্নভাবে রয়েছে। দেখুন, নুরুল ইজাহ কিতাবে। নিম্নে তার সারাংশ হলো-
✓ বিসমিল্লাহ বলার পরে পড়বে
الْحَمْدُ للهِ الَّذِي جَعَلَ الْمَاءَ طَهُورًا.
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি জাআলাল মাআ তাহুরা।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর, যিনি পানিকে পবিত্র করেছেন।
✓কুলি করার সময় পড়বে—
اللَّهُمَّ اسْقِنِي مِنْ حَوْضِ نَبِيكَ مُحَمَّدٍ كَأْشَالَا أَلَمَا بَعْدَ هَا أَبَدًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাসকিনি মিন হাউযি নাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন, কা’সান লা আযমাউ বা’দাহা আবাদান ।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে আপনার নবির হাউজ থেকে পেয়ালা পান করাবেন, যাতে এর পরে কখনো তৃষ্ণার্থ না হই।
✓ নাকে পানি দেওয়ার সময় পড়বে-
اللهُمَّ لَا تَحر مُنِي رَائِحَةَ نَعِييكَ وَجَنَّاتِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনি রা-ইহাতা নাঈমিকা ওয়া জান্নাতিকা ।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে আপনার নেয়ামতরাজি ও জান্নাতের সুগন্ধি থেকে বঞ্চিত করবেন না।
আরো পড়ুন : ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি ?
✓মুখ ধোয়ার সময় পড়বে
اللَّهُمَّ بَيِّضُ وَجْهِي يَوْمَ تَبيَضُ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বাইয়িদ ওয়াজহি ইয়াউমা তারআদু উজুহুন, ওয়া তাসওয়াদু |
অর্থ: হে আল্লাহ! সেদিন আমার মুখ উজ্জ্বল করুন, যেদিন কোনো কোনো মুখ উজ্জ্বল হবে, আর কোনো কোনো মুখ হবে কালো ৷
✓ দুই হাত ধোয়ার সময় পড়বে-
اللهُمَّ أَعْطِنِي كِتَابِي بِيَمِينِنِي اللَّهُمَّ لَا تُعْطِنِي كِتَابِ بِشِمَالِي .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আতি কিতাবি বিয়ামিনি লা তুতি কিতাবি বিশিমালি ।
অর্থ: হে আল্লাহ! কেয়ামতের দিন আমার আমলনামা ডান হাতে দান করুন। হে আল্লাহ! বাম হাতে আমলনামা দিয়েন না ।
✓ মাথা মাসাহের সময় পড়বে-
اللَّهُمَّ حَرِّمُ شَعْرِئَ وَبَشَرِى عَلَى النَّارِ، وَأَظْلَنِى تَحْتَ ظِلِ عَرْشِكَ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা হাররিম শারি ওয়া বাশারি আলান নারি, ওয়া আলিলিনি তাহতা যিল্লি আরশিকা ইয়াউমা লা যিল্লা ইল্লা যিল্লুকা ৷
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার চুল-চামড়া জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিন। আর আমাকে আপনার আরশের নিচে ছায়া দিন, যেদিন আপনার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না।
✓ কান মাসাহ করার সময় পড়বে-
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাল্লাযিনা ইয়াসতামিউনাল কাওলা ফাইয়াত্তাবিউনা আহসানাহ ।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে সেসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর উত্তমটার অনুসরণ করে।
✓ দুই পা ধোয়ার সময় পড়বে
اللَّهُمَّ ثَبِتُ قَدَمِي عَلَى الصِّرَاطِ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাব্বিত কাদামি আলাস সিরাত I
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে সিরাতে মুস্তাকিমের ওপর অবিচল রাখুন।
■ ইমাম নাসাঈ ও ইবনুস সুন্নি তাদের কিতাবে হযরত আবু মুসা আশআরি রাযি.- এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন-
أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ (ﷺ) بِوَضُوءٍ ، فَسَمِعْتُهُ يَدْعُو وَيَقُولُ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، وَوَسْعُ لِي فِي دَارِي وَبَارِكْ لِي فِي رِزْقِ، فَقُلْتُ : يَا نَبِيَّ اللهِ، سَمِعْتُكَ تَدْعُو بِكَذَا وَكَذَا ، قَالَ : وَهَلْ تَرَكْنَ مِنْ شَيْءٍ؟
অর্থ: আমি আল্লাহর রাসূল সাঃ কাছে অজুর পানি নিয়ে এলাম। অতঃপর তিনি অজু করলেন, তখন আমি তাকে এই দুআ পড়তে শুনলাম-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، وَوَسَعُ لِي فِي دَارِي ، وَبَارِكْ لِي فِي رِزْق.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লি যামবি, ওয়া ওয়াসসি’ লি ফি দারি ওয়া বারিক লি ফি রিযাকি ।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার পাপ মার্জন করে দাও, আমার ঘরে প্রশস্ততা দাও এবং আমার রিযিকে বরকত দাও। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবি, আমি আপনাকে এমনটি বলতে শুনলাম? তিনি উত্তর দিলেন, আর কি কিছু রয়ে গেল? [আমালুল ইয়াউম শুয়াল্লাইলাহ: ৮০, নাসাই, আমানুল ইয়াউমি ওয়ারাইলাহা ২৮, ইবনুস সুন্নি]
ট্যাগ : অযুর দোয়া,অযুর দোয়া বাংলা, অজুর দোয়া ও নিয়ত,অযুর দোয়া হাদিস,অযুর দোয়া বাংলা অনুবাদ,অযুর দোয়া ছবি, অজুর দোয়া,অযুর দোয়া ও নিয়ম,অজুর দোয়া ও নিয়ত,নামাজের অজুর দোয়া,অজুর দোয়া আরবি,অযুর দোয়া ও নিয়ত,অযুর দোয়া,অযুর দোয়া বাংলা, অজুর দোয়া ও নিয়ত,অযুর দোয়া হাদিস,অযুর দোয়া বাংলা অনুবাদ,অযুর দোয়া ছবি, অজুর দোয়া,অযুর দোয়া ও নিয়ম,অজুর দোয়া ও নিয়ত,নামাজের অজুর দোয়া,অজুর দোয়া আরবি,অযুর দোয়া ও নিয়ত, |