মুতাজিলা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মতবাদ

মুতাজিলা,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মতবাদ,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি,মুতাজিলা কারা,মুতাজিলা ইতিহাস ও দর্শন,মুতাজিলা সম্প্রদায়,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মতবাদ,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও তাদের মতবাদ,মুতাজিলা কারা তাদের মতবাদ,মুতাজিলা সম্পর্কে টিকা,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে,
মুতাজিলা কোন খলিফার রাষ্ট্রধর্ম ছিল,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও তাদের মতবাদ সমূহ আলোচনা কর,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও তাদের মতবাদসমূহ আলোচনা কর,মুতাজিলা সম্পর্কে একটি টীকা লেখ,মুতাজিলা আকিদা,মুতাজিলা কোন খলিফার রাষ্ট্রধর্ম,মুতাজিলা সম্পর্কে লিখ,মুতাজিলা কারা তাদের মতবাদ,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মতবাদ,

মুতাজিলা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মতবাদ

ইসলামী দর্শনে মুতাযিলা সম্প্রদায় সর্বশ্রেষ্ঠ যুক্তিবাদী হিসেবে পরিচিত। গ্রিক দর্শনের প্রভাবে মুসলিম দর্শনে যে সকল যুক্তিবাদী সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে, তাদের মধ্যে মুতাযিলা সম্প্রদায় অন্যতম। খারেজীদের উগ্র ধর্মীয় মতবাদ এবং মুরজিয়াদের নৈতিক শিথিলতার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ মুতাযিলা সম্প্রদায়ের জন্ম হয়। মুতাযিলা সম্প্রদায় বেশকিছু নবতর মতবাদে বিশ্বাসী ছিল। যে সকল বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে মুতাযিলা মতবাদ গড়ে উঠেছিল। নিম্নে মুতাযিলাদের আকিদাগত মূলনীতি সংশ্লিষ্ট আলোচনা উপস্থাপন করা হলো।

১. আল্লাহর একত্ববাদ : মুতাযিলাদের মতে, আল্লাহর একত্ববাদ বলতে বোঝায়, আল্লাহর সত্তার বাইরে কোনো সিফাত বা গুণ নেই। তারা নিজেদের আল্লাহর নিরঙ্কুশ একত্ববাদে বিশ্বাসী বলে ভাবত, তাই নিজেদের তারা একত্ববাদী বলে প্রচার করত।

২. আল্লাহর গুণাবলি : মুতাযিলাগণ আল্লাহর সব গুণকে এক করে দেখে। তাদের মতে, আল্লাহর জাত বা সত্তা ছাড়া আর যেসব গুণ ধরে নেয়া হয় তা সঠিক চিত্র নয়। কেননা তাঁর সত্তা বহির্ভূত কোনো গুণ নেই। সুতরাং তারা আল্লাহ তায়ালার গুণসমূহ তাঁর সত্তা থেকে পৃথক করে দেখতে নারাজ।

৩. আল্লাহর দর্শন : মুতাযিলারা আল্লাহ তায়ালার দৈহিক আকৃতি নেই -এ মতবাদের আলোকে নিম্নোক্ত আয়াত প্রমাণস্বরূপ তুলে ধরে পরকালে আল্লাহর দর্শন লাভ অস্বীকার করে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন- قال رب ارنى انظر اليك قال لن ترانی

৪. নবীর সুপারিশ : মুতাযিলারা বলে, আল্লাহ ন্যায়পরায়ণ। তাই কেউ ভালো করলে ভালো এবং মন্দ করলে মন্দ পরিণাম ভোগ করবে। এক্ষেত্রে নবীর সুপারিশের কোনো প্রয়োজন নেই।

৫. কুরআনের চিরন্তনতা : মুতাযিলাগণ কুরআনকে চিরন্তন মনে করে না। তাদের মতে, কুরআনকে চিরন্তন মনে করলে আল্লাহ এবং কুরআন এ দুটি চিরন্তন সত্তা একত্র হয়, যা আল্লাহর একত্ববাদের মূলে আঘাত হানে।

৬. বিশ্ব সৃষ্টির রহস্য : বিশ্ব সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে মুতাযিলারা আল কুরআনের সাথে এরিস্টটলের মতের সমন্বয় সাধনের অপপ্রয়াসে ব্রতী হয়। আল কুরআনে বিশ্বকে সৃষ্ট বলে ঘোষণা করা হয়েছে; কিন্তু এরিস্টটলের মতে, বিশ্ব চিরন্তন। মুতাযিলাদের মতে, বিশ্ব সৃষ্ট ও চিরন্তন দুই-ই। বিশ্ব অনন্তকাল থেকে স্তব্ধ ছিল, মহান আল্লাহ এতে গতি সঞ্চার করেন।

৭. মানুষের কর্মের স্বাধীনতা : মুতাযিলারা মনে করে, মানুষের ইচ্ছা ও কর্মের স্বাধীনতা আছে। মানুষ নিজেই তার কর্মের স্রষ্টা। তারা বলে মানুষকে এতটুকু স্বাধীনতা দেয়া না হলে কিভাবে শাস্তি বা পুরস্কার দেয়া হবে? নিজেদের মতের পক্ষে তারা কুরআনের আয়াত প্রমাণস্বরূপ তুলে ধরে। যেমন পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- فمن يعمل مثقال ذرة خيرا يره ومن يعمل مثقال ذرة شرا يره –

৮. শুভ ও অশুভ : মুতাযিলারা মনে করে, আল্লাহ তায়ালা ভালো কাজের সৃষ্টিকর্তা আর বান্দা অশুভ বা খারাপ কাজের সৃষ্টিকর্তা। অতএব শুভ বা কল্যাণ আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে আর অকল্যাণ হয় ব্যক্তির কারণে। নিজেদের পোষিত এ মতবাদের পক্ষেও তারা প্রমাণস্বরূপ কুরআনের আয়াত উপস্থাপন করে। যেমন, আল্লাহ বলেন- ما اصابك من حسنة فمن الله وما اصابك من سيئة فمن نفسك.

৯. পুরস্কার ও শাস্তি : মুতাযিলাদের মতে, আল্লাহ তায়ালা পরকালে সৎ ব্যক্তিদের জান্নাত এবং অসৎ ব্যক্তিদের জাহান্নাম দিতে বাধ্য। এখানে আল্লাহ তায়ালা নিজের খেয়াল খুশির পরিচয় দিলে তাঁর ন্যায়বিচার অর্থহীন হয়ে পড়বে।

১০. মৃতব্যক্তির জন্য দোয়া : মুতাযিলাদের মতে, মানুষের মৃত্যুর পর তার জন্য দোয়া কালামের কোনো দরকার নেই। কেননা পরজগতে মানুষের ভালো কাজের জন্য আল্লাহ তায়ালা তাকে পুরস্কৃত করবেন এবং মন্দ কাজের জন্য কঠিন শাস্তি দেবেন। আল্লাহ স্বীয় ন্যায়বিচার গুণ প্রতিষ্ঠার খাতিরে এরূপ করতে বাধ্য। সুতরাং মৃতের জন্য মাগফেরাতের দোয়া নিরর্থক।

১১. কবীরা গুনাহকারীর অবস্থা : কবীরা গুনাহকারীদের খারেজীরা কাফের এবং মুরজিয়ারা মুমিন বলে থাকে; কিন্তু মুতাযিলারা এ দু’মতবাদ অস্বীকার করে এর মধ্যবর্তী অবস্থা গ্রহণ করে । অর্থাৎ তাদের মতে, সে ব্যক্তি কাফেরও নয়, মুমিনও নয়।

১২. সৎকাজে আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ : মুতাযিলাদের মতে, শুধু সরল বিশ্বাস স্থাপন ও তদনুযায়ী আমল করলেই চলবে না; বরং বিশ্বাসের সামাজিক ভিত্তি অর্জন করতে হবে। কারণ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক।

১৩. বস্তুর অস্তিত্ব সম্পর্কিত মতবাদ : মুতাযিলাদের মতে, অস্তিত্ব বস্তুর অপরিহার্য গুণ নয়; বরং একটি স্বাভাবিক গুণ মাত্র। তবে যে বস্তুর অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে তা সত্তা পদবাচ্য হয় । পক্ষান্তরে অস্তিত্বহীন বস্তু সত্তা পদবাচ্য নয়।

১৪. মিরাজের ঘটনা : মুতাযিলাগণ রাসূল (স)-এর সশরীরে মিরাজ অস্বীকার করে। তাদের মতে, মিরাজ সশরীরে নয়; বরং তা আত্মিক ও স্বপ্নযোগে হয়েছে। তারা তাদের মতের পক্ষে মুয়াবিয়া (রা) বর্ণিত হাদীসটি প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপন করেন।

১৫. সৎ ও অসৎ কর্ম : মুতাযিলাদের মতে, মানুষ বিবেকবান। যদি মানুষ কোনো অন্যায় অসৎ কাজ করে, সেজন্য সে দায়ী, আল্লাহ নয়।

১৬. আল্লাহর কার্যকলাপ : মুতাযিলাদের মতে, আল্লাহর কার্যকলাপ যুক্তিসংগত, তাঁর কোনো কার্যকলাপই অযৌক্তিক হতে পারে না।

এ ছাড়া তাদের আরো কতিপয় বিশ্বাসের সারসংক্ষেপ হলো-
১৭. তারা কবরে মুনকার নাকীরের আগমন অস্বীকার করে।
১৮. বিচার দিবসের আভাস এবং দাজ্জালের আবির্ভাব অস্বীকার করে।
১৯. কেরামান কাতেবীনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে।
২০. তারা হাউযে কাওসারের অস্তিত্ব ও বর্তমানে অস্তিত্বশীল সৃষ্ট বেহেশত দোযখের অস্তিত্ব স্বীকার করে না।
২১. তারা অলীর অলৌকিকতা বা কারামত অস্বীকার করে।

মুতাজিলা সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক মতবাদ

রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মুতাযিলারা প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা)-কে খেলাফতের ন্যায়সংগত দাবিদার বলে স্বীকার করে; কিন্তু খলিফাদের যোগ্যতা বিচারে তাদের মত হলো, ক্রমান্বয়ে প্রথম খলিফা দ্বিতীয় খলিফা থেকে, দ্বিতীয় খলিফা তৃতীয় খলিফা থেকে, তৃতীয় খলিফা চতুর্থ খলিফা থেকে অধিকতর যোগ্য; কিন্তু মুতাযিলাদের অন্য দলের মতে, চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা) চার খলিফার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন।

আরো পড়ুন :

মুতাজিলা কারা

মুতাজিলা শব্দের অর্থ কি

মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও ইতিহাস

মুতাজিলা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে

শিয়াদের পরিচয়

শিয়া শব্দের অর্থ কি

শিয়াদের আকিদা এর মূলনীতি

শিয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস

খারেজীদের পরিচয়

খারেজী শব্দের অর্থ কি

খারেজীদের ধর্মীয় মতবাদ কি

খারেজীদের রাজনৈতিক মতবাদ

খারেজী কাকে বলে

খারেজী নামকরণের কারণ

খারেজী সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

খারেজীদের বিভিন্ন দল ও তাদের প্রতিষ্ঠাতাদের নাম

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর ইতিহাস

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত

أهل السنة والجماعة -এর পরিচিতি

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বৈশিষ্ট্য

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ইতিহাস

কাদিয়ানী মতবাদের পরিচিতি

কাদিয়ানীদের উৎপত্তির ইতিহাস

কাদিয়ানীদের আকিদার মূলনীতিসমূহ

ট্যাগ সমূহ : মুতাজিলা,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মতবাদ,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি,মুতাজিলা কারা,মুতাজিলা ইতিহাস ও দর্শন,মুতাজিলা সম্প্রদায়,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মতবাদ,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও তাদের মতবাদ,মুতাজিলা কারা তাদের মতবাদ,মুতাজিলা সম্পর্কে টিকা,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে, মুতাজিলা কোন খলিফার রাষ্ট্রধর্ম ছিল,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও তাদের মতবাদ সমূহ আলোচনা কর,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও তাদের মতবাদসমূহ আলোচনা কর,মুতাজিলা সম্পর্কে একটি টীকা লেখ,মুতাজিলা আকিদা,মুতাজিলা কোন খলিফার রাষ্ট্রধর্ম,মুতাজিলা সম্পর্কে লিখ,মুতাজিলা কারা তাদের মতবাদ,মুতাজিলা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মতবাদ,

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top